রিজওয়ান উইনস ইট ফর পাকিস্তান!

জয়সূচক রান আসল মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাট থেকে। আসলে এখানে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি মানায়। ব্যাথা নিয়েও খেলেছেন, রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে। তাঁর ১৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসেই নিশ্চিত হয়েছে পাকিস্তানের দ্বিতীয় জয়।

বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের সাতবারের দেখায় একবারও হারেনি পাকিস্তান, কিন্তু এবারের আসরে সেই ধারা ধরতে রাখতে হলে ইতিহাস গড়তে হতো বাবর আজমদের। বিশ্বকাপ ইতিহাসের রেকর্ড সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিততে হতো – আর সেটাই করেছে তাঁরা, লঙ্কানদের দেয়া ৩৪৫ রানের বিশাল টার্গেট টপকে গিয়েছে ১০ বল হাতে রেখেই।

টস ভাগ্য এদিন সাথে ছিল দাসুন শানাকার, বেছে নিয়েছেন ব্যাটিং। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে সময় নেননি দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা। কুশল পেরেরা কোন রান না করে ফিরে গেলেও পাথুম নিশাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিসের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৮ রান তোলে দলটি; দলীয় শতক পূর্ণ করতেও ১৭ ওভারের বেশি লাগেনি।

HYDERABAD, INDIA – OCTOBER 10: Mohammad Rizwan of Pakistan celebrates their century during the ICC Men’s Cricket World Cup India 2023 between Pakistan and Sri Lanka at Rajiv Gandhi International Stadium on October 10, 2023 in Hyderabad, India. (Photo by Alex Davidson-ICC/ICC via Getty Images)

ততক্ষণে দুই ব্যাটারই পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি নিশাঙ্কা, শাদাব খানের বলে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। কিন্তু তাতে শাপেবর হয় শ্রীলঙ্কার, সাদিরা সামারাবিক্রমাকে সঙ্গে নিয়ে মেন্ডিস রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে শুরু করেন। মাত্র ৬৯ বলের জুটিতে দুইজন স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ১১১ রান।

এমন বিধ্বংসী জুটিতে মূল অবদান অবশ্য ডানহাতি ব্যাটারেরই, তাঁর অতিমানবীয় সেঞ্চুরির বদৌলতেই ৩০ ওভারের পূর্বে ২০০ রান পার করে লঙ্কানরা। শেষমেশ ৭৭ বলে ১২২ রানের মাথায় থামেন মেন্ডিস।

যদিও সামারাবিক্রমাকে থামানো যায়নি, সতীর্থদের সাথে ছোট ছোট জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। দিনের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান এই তরুণও পেয়ে যান সেঞ্চুরি, আর এতে ভর করেই নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ৩৪৪ রানের পাহাড়সম পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা, যদিও ডেথ ওভারে প্রত্যাশিত রান তুলতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে তাঁদের।

রান তাড়ার শুরুতেই ওপেনার ইমাম উল হককে হারায় পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজমও পারেননি স্থায়ী হতে, অথচ এ ম্যাচে ভাল কিছু করতে তাঁর উপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা ছিল ভক্ত-সমর্থকদের।

এরপর অবশ্য পাওয়ার প্লে-তে কোন বিপদ হতে দেননি রিজওয়ান, শফিক; এই দুইজনের সময়োপযোগী জুটিতে ভর করে ম্যাচে ফিরে পাকিস্তান। তবে লঙ্কানরা ম্যাচের লাগাম ছাড়েনি এক মুহূর্তের জন্যও, তাই তো আস্কিং রান রেট ক্রমাগত বেড়ে চলছিল সময়ের সাথে সাথে।

কিন্তু হাল ছাড়েননি দুই ব্যাটার, তাঁদের অবিচল ব্যাটিংয়েই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পায় পাকিস্তান। বিশেষ করে পাক ওপেনার ছিলেন দারুণ, ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান তিনি। আর এতে ভর করেই ৩২ ওভারের মধ্যে দলীয় ২০০ রান পেরিয়ে যায় দলটি। কিন্তু ১১৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তরুণ এই ব্যাটারকে।

তবে একপ্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন রিজওয়ান, সময়োপযোগী গতিতে রান তুলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন জয়ের দিকে। সেই সঙ্গে দিনের চতুর্থ সেঞ্চুরিয়ান নিজের নাম লেখান স্কোরবোর্ডে – বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম একই ম্যাচে চার সেঞ্চুরিয়ান দেখা গিয়েছে।

পাকিস্তানের রান যখন ৩০০ স্পর্শ করে সমীকরণ তখন নেমে আসে ৩৮ বলে ৪৩ – সহজ এই কাজটা করতে কোন সমস্যা-ই হয়নি রিজওয়ানদের। ইফতেখার আহমেদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ছয় উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল। ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে এই জয় নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস দিবে ৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link