আবদুল্লাহ শফিক, ধারাবাহিকতার প্রতীকী

বয়সটা ২৩, আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা মাত্র চারটি – এতটুকু সম্বল করেই আবদুল্লাহ শফিক এসেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ। আর পাকিস্তানের দ্বিতীয় ম্যাচেই সুযোগ আসে মাঠে নামার, তাও আবার দলের অন্যতম অভিজ্ঞ সদস্য ফখর জামানের পরিবর্তে।

তবে বাইশ গজের লড়াইয়ে তাঁর অনভিজ্ঞতা সুযোগ নিতে পারেনি কেউই, বলতে হয় তিনি নিতে দেননি। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই বিশ্ব মানের বোলারদের সামলে অবলীলায় রান করেছেন এই ব্যাটার।

আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ব্যতিক্রম হয়নি, তুলে নিয়েছেন দারুণ এক ফিফটি। ৭৫ বলে ৫৮ রান এসেছে শফিকের ব্যাট থেকে। আফগান স্পিনারদের সামলে রান করেছেন, সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক বাবর আজমকে। এর আগে ওপেনিংয়েও দলকে ভাল শুরু এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

শুরুটা করেছিলেন রয়ে সয়ে, প্রথম আট রান করেছেন ১৬ বলে। এরপরই পঞ্চম ওভারে নাভিন উল হককে এক চার এবং এক ছয় হাঁকিয়ে রান তোলার গতি বাড়ান এই ডানহাতি। মজার ব্যাপার, তাঁর মারা ছক্কাই এই বছর পাকিস্তানের পাওয়ার প্লের প্রথম ওভার বাউন্ডারি। অষ্টম ওভারে আবারো মুজিবুর রহমানের টানা দুই বল বাউন্ডারি ছাড়া করেছিলেন তিনি।

পাওয়ার প্লে শেষে ইমাম আউট হলে খানিকটা চাপে পড়ে পাকিস্তান, নিয়ন্ত্রিত লাইন লেন্থে আফগান বোলাররাও ফায়দা নেয় সেটার। তবে এই তরুণ দলকে পথ হারাতে দেননি, সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। নুর আহমেদের বলে আউট হওয়ার আগে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি; যা কি না এই বিশ্বকাপে তাঁর তৃতীয় পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস।

বিস্ময় জাগারই কথা, মাত্র চার ম্যাচ খেলে দুই ফিফটি আর সেঞ্চুরি ঝুলিতে পুরেছেন শফিক। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো শতক, বিশ্ব আসরে প্রথমবার খেলতে এসেই ১০৩ বলে ১১৩ রান করেছিলেন তিনি। আর সেই সুবাদেই ৩৪৫ রানের পাহাড় টপকে রেকর্ড জয় পেয়েছিল পাকিস্তান।

পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও শুরুটা পেয়েছিলেন। তবে ক্ষণিকের ভুলে সেটাকে দীর্ঘ করতে পারেননি। সেই দুঃখ ভুলতেই পরের দুই ম্যাচে দুইটি দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিলেন এই উদীয়মান তারকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬১ বলে করেছিলেন ৬৭; তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারলে হয়তো সেদিনও স্মরণীয় কোন জয় পেতো বাবর আজমের দল।

সবমিলিয়ে ভারত বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলা এই পাক ওপেনারের রান ২৫৫; গড় ষাটের ওপর। রানের হিসেবে তাঁর ওপর আছে কেবল পাঁচজন, তবে তাঁরা সবাই খেলেছেন একটা ম্যাচ বেশি। বলাই যায়, সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলতে পারলে তালিকায় আরো উপরে উঠতে পারতেন তিনি।

কিন্তু একটা বার্তা অন্তত স্পষ্ট, ধারাবাহিকতার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন আবদুল্লাহ শফিক। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের মত বিশ্বসেরা ব্যাটারদের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করছেন – এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আগামী এক দশক অন্তত টপ অর্ডার নিয়ে ভাবতে হবে না পাকিস্তানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link