দেশের বাইরের কোন লিগে প্রথমবার, একই দিনে দুই ম্যাচ – চাপ আর ক্লান্তি বোধহয় একসাথে ভর করার কথা তাসকিন আহমেদের কাঁধে। কিন্তু, বাংলার স্পিডস্টারকে মাঠে দেখে মনেই হয়নি তিনি তেমন কিছু অনুভব করছেন।
কি জানি, হয়তো তাঁর আগুন জোরানো বোলিংয়ে আগেই বোল্ড আউট হয়ে গিয়েছিল সব চাপ আর ক্লান্তি। তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড আউট হয়েছেন আরেকজন; জোবার্গ বাফেলোর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ডিলানো পটগিটার স্ট্যাম্প হারিয়েছেন এই পেসারের গতির ঝড়ে।
পুরো ম্যাচ জুড়েই অবশ্য তাসকিন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দুই ওভারের স্পেলে ১১ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন তিন উইকেট। তাঁর কল্যানেই প্রথমবারের মত জিম আফ্রো টি-টেন লিগে কোন পেসার এক ম্যাচে তিন উইকেট শিকারের কীর্তি গড়লো।
টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া সিকান্দার রাজা দিনের প্রথম ম্যাচের মত এবারও ভরসা করলেন তাসকিন আহমেদের উপর। সেই ভরসার প্রতিদান দিতে কোন ছাড় দেননি এই টাইগার তারকা। দুই দিকেই সুইং করিয়ে নতুন বলের ফায়দা তুলে নিয়েছেন তিনি।
প্রথম ওভারে পাঁচ রান এসেছে ঠিকই, তবে চারটা এসেছিল এজ হয়ে কিপারকে ফাঁকি দিয়ে। তা না হলে শুরুর ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন তিনি। সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন পরের ওভারেই। প্রথম ডেলিভারিতেই তুলে নিয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজকে, পঞ্চম বলে আউট করেছেন রবি বোপারাকে।
আর শেষ বলে তো স্রেফ ভেলকি দেখিয়েছেন, দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে পটগিটারের স্ট্যাম্প হাওয়ায় ভাসিয়েছেন। যে বলটা চার হয়েছে সেটাও ভাগ্য ভাল হলে মিডউইকেটে ক্যাচ হতে পারতো; ২-০-১১-৩ এমন বিধ্বংসী স্পেলও তাই তাসকিনের বোলিং পারফরম্যান্স বোঝানোর জন্য যথেষ্ট নয় ৷
সব মিলিয়ে বারো বলের মধ্যে আটটা ডট বল দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ; অভিষেক ম্যাচে হারারে হ্যারিকেন্সের বিপক্ষেও সমান সংখ্যক ডট বল করেছিলেন তিনি। সে ম্যাচেও এক উইকেট পেয়েছিলেন এই ডানহাতি, আর রান খরচ করেছিলেন মাত্র সাত!
সারাদিনে চার ওভার বোলিং করা তাসকিন আহমেদ যেমন ব্যাটারদের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন তেমনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন ধারাভাষ্যকারদেরও। যতক্ষণ ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে ততক্ষণই স্তুতি গেয়েছেন ধারাভাষ্যকাররা।
দিনের সেরা পারফরম্যান্স করার পর এমনটা অবশ্য স্বাভাবিকই মনে হবে ঢাকা এক্সপ্রেসের কাছে। জাতীয় দলের কোন ম্যাচ নয়, জাঁকজমকপূর্ণ কোন ফ্রাঞ্চাইজি লিগও নয় – ক্রিকেট বিশ্বে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়েতে আয়োজিত একটি টুর্নামেন্টের প্রথম আসর।
তাই প্রমাণেরও তাড়না নেই খুব একটা, প্রত্যাশার ভারও নেই। তবু তাসকিন যেভাবে খেললেন, যে নিবেদন তিনি দেখালেন তাতে গর্বে বুক ফুলে উঠতেই পারে বাংলাদেশীদের।
যদিও ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তাঁর দল হেরেছে ১০ রানে। জিতেছে মুশফিকের দল জোবার্গ। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন মুশফিক। ২৩ বলে ৮টি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি।
৭ উইকেটের বিনিময়ে ১০৫ রানের পুঁজি পায় টিম জোবার্গ। যেটা টপকানো সম্ভব হয়নি সিকান্দার রাজার দলের।