এমন এক জুটির জন্যেই তো তৃষ্ণিত ছিল সবার মন। লম্বা একটা সময় পরই বাংলাদেশের ওপেনিং থেকে এলো রান। গা গরমের ম্যাচ হলেও তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস জুটি একটু স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে গেলো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছে ১৩১ রান।
১৩ ইনিংস পর বাংলাদেশের ওপেনিং পার্টনারশীপ থেকে এসেছে ১০০ বা তার বেশি রান। স্বস্তির নয় কি? এর থেকেও স্বস্তির বিষয় লিটন কুমার দাসের রানে ফেরা। পাশাপাশি তরুণ তানজিদ হাসান তামিমের আত্মবিশ্বাসের জোগান দেওয়া।
যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ, তাই এই রান বা জুটি যুক্ত হবে না পরিসংখ্যানের পাতায়। এই জুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় তবু ঠাই পাবে। ছোট পরিসরে হলেও পাবে। পাওয়া উচিত। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই জুটিই তো বাংলাদেশের একেবারে ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাসের খুঁটিতে পরিণত হয়েছে।
নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগেই কত সমালোচনা আর টানাপোড়েন। সেসবের মাঝেই বাংলাদেশ দল নিজেদের বিশ্বকাপ মিশনে নামার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে। শ্রীলঙ্কা বোর্ডে তুলে দিলো ২৬৩ রান।
তবে যেভাবে শুরু করেছিল লঙ্কান ব্যাটাররা, তাতে করে বোর্ডে রান থাকার কথা ছিল নিদেনপক্ষে ৩৫০। তবে সেটা হতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। বিশেষ করে স্পিনাররা। সেটাও আসলে বাংলাদেশের প্রাপ্তিই বলা চলে। একেবারে ব্যাটিং সহায়ক একটা পিচে ২৫০ রানের আশেপাশে প্রতিপক্ষকে আটকে ফেলাটাও একটা কৃতীত্ব। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ।
তবে লিটন তার তরুণ সঙ্গী তানজিদ তামিমকে নিয়ে কোন বাড়তি ঝুঁকি নিতেই চাইলেন না। সেটার প্রয়োজনও বিশেষ ছিল না। ধীর পায়ে দু’জনে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঝালিয়ে নিলেন। শান্ত ভঙ্গিমায় এগিয়ে যেতে থাকে দু’জনের ইনিংস সমানতালে। তবে একেবারেই যে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তা কিন্তু নয়। লিটন, তামিম যখন যে সুযোগ পেয়েছেন বাউন্ডারি আদায় করেছেন।
তাদের করে আস্কিং রানরেটের চাপ কমেছে, স্ট্রাইকরেটও হয়েছে চলনসই। সেই সাথে দেওয়া গেছে অনেক সমালোচনা আর তীর্যক প্রশ্নের জবাব। চাপটা খানিক জুনিয়র তামিমের উপরই ছিল বেশি। তাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে তামিম ইকবাল খানের জায়গায়। কি পাহাড়সম চাপ বলুন! ১৭ বছরের ক্যারিয়ার যার তার জায়গা কি নেওয়া যায়!
তবুও তানজিদ তামিম দৃঢ়তা দেখালেন। তিনি বোঝালেন ঠিক কি কারণে তাকেই যোগ্য ভেবেছে নির্বাচক থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমনই স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর তিনি দারুণ সব স্মৃতি সৃষ্টি করেছেন। তামিমের খেলা এই ইনিংসটিও তেমন কিছুর জানান দেয়।
অন্যদিকে লিটন যে কম চাপে ছিলেন তা কিন্তু নয়। অফ ফর্মের গ্যাড়াকলে পিষ্ট হয়েছে লম্বা সময় ধরে। রাগে-ক্ষোভে নিজের পছন্দের ব্যাট ভেঙেছেন। এরপর ঠিকই কোন ধরণের বিজ্ঞাপনহীন ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন তিনি। জানান দিলেন নানন্দিক লিটন ফিরছেন।
যদিও ৬১ রানে ফিরে গেছেন তিনি। তবে লিটনের এই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসটি তার জন্যে স্বস্তিদায়ক। সেই সাথে গোটা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের জন্যেও। লিটন ৬১ রানে থামলেও তামিম নিজের ইনিংসটি বাড়িয়ে নিয়ে যান আরও খানিকটা দূর। আফসোস ইনিংসটি যুক্ত হবে না রেকর্ড বুকে।
তবুও ১৩১ রানের এই জুটি নির্ভার করে দেওয়া এক জুটি। এই যুগলবন্দী নিরাশার কালো ঘরে আশার তীব্র আলো। হয়ত যতটা খারাপ ভাবছে সবাই, ততটা হবে খারাপ এবারের বিশ্বকাপ।