আহা! কতদিন বাদে। ঢাকার আকাশ ঢেকে আছে ঘনকালো মেঘে। তবে তাসমানিয়ায় যেন নতুন এক সূর্যের আভাস। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি নিয়ে কতই না শঙ্কা। এই তো সেদিনও মেক শিফট ওপেনার পন্থাও অবলম্বন করেছে টাইগার ক্রিকেটাররা। তাতেও আসেনি সফলতা। গোড়ায় গলদ, নিয়েই ব্যাটিং অর্ডারের শুরু করতে হত বাংলাদেশের। তবে তেমনটা আর ঘটতে দেখা যায়নি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রথম ম্যাচে।
এদিন টাইগারদের ইনিংসের সূচনা করেছিলেন দুই বাঁ-হাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। একেবারে দৃশ্যপটের বাইরে থেকে এসে মূল একাদশে সৌম্য। আর শত সমালোচনা থাকলেও শান্ততেই ভরসা করে বাংলাদেশে টিম ম্যানেজমেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু সে সবকে তোয়াক্কাই যেন করলেন না সৌম-শান্ত।
নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেই ডাচ বোলারদের উপর শুরু থেকেই চড়াও হওয়ার প্রচেষ্টা চালায় টাইগার ওপেনিং জুটি। বহুদিন বাদে উদ্বোধনী জুটি থেকে প্রায় চল্লিশোর্ধ রান আসে। এ যেন আভাস দিচ্ছিল একটা ভাল দিনের। দিনের শুরুটা ভাল হলে নিশ্চয়ই দিনটা ভাল যাবার কথা। তবে সেটা যদি হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তবে যে কোন পূর্বাভাস মিথ্যে প্রমাণিত হতে সময় লাগে না এক মুহূর্ত। হুরমুর করে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। ব্যাস! শুরুটা আশানুরুপ হলেও শেষটায় একরাশ হতাশাই জড়ো করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
তবে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে অবশ্য ওপেনিং জুটির খানিক প্রশংসা করা যেতেই পারে। ম্যাচের হিসেবে ৩০ ম্যাচ বাদে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছে ৪০ এর বেশি রান। বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের জন্যে নিশ্চয়ই বেশ হৃদয় জুড়ানো মুহূর্ত। এত দিন বাদে এমন একটা শুরু দেখার অপেক্ষাতেই ছিল গোটা বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে এমন শুরু নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ওপেনিং ব্যাটারদের।
এদিন সমালোচনার বেড়াজালে জর্জরিত শান্তকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে দেখা যায় বাইশ গজে। নান্দনিক সব শটে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে থাকেন। সৌম্য সরকার নিজেকে থিতু করবার প্রয়াসটাই করে গিয়েছেন। তবুও ডাচ বোলারদের বেশ চাপেই রাখতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের উদ্বোধনী দুই ব্যাটার। প্রায় ৮.৬০ রান রেটে রান করেছেন সৌম্য-শান্ত। নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকই করতে পেরেছিলেন তাঁরা। তবে ইনিংসগুলো বড় করতে না পারার আক্ষেপটা নিশ্চয়ই পোড়াচ্ছে তাদের।
কেননা সৌম্য-শান্ত ফিরে যাওয়ার পর তাসের ঘরের মত উইকেটের পতন ঘটে। যেখানে শুরুতে বাংলাদেশ ১৮০ রানের আশেপাশের স্বপ্নে বুক বাঁধতে শুরু করেছিল, সেখানে তাদের থামতে হয়েছে ১৪৪ রানে। মাঝে আফিফ হোসেন হাল ধরার চেষ্টা করেন আর শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ঝোড়ো ক্যামিওতে এই স্বল্প পুঁজি নিয়েই বোলিং করতে নামে টাইগার বোলাররা। আর এরপরের ঘটনা নিশ্চয়ই কারও অজানা নয়।
বাংলাদেশের এই শুরুটা এখানেই থেমে না যাক। অন্তত পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই শুভ সূচনাটুকু হোক। টাইগার ভক্তদের আনন্দ-উল্লাসের আরও কিছু মুহূর্ত সৃষ্টি হোক।