আগমনটা নেইমারের শূন্যস্থান পূরণে, তবে ফিলিপে কৌতিনহোর প্রাপ্তিযোগ কেবলই শূন্য। লিভারপুল থেকে রেকর্ড দামে বার্সেলোনায় এসে সম্ভাবনার এক সূর্য শুরুতেই অস্ত গেল। কোথায় হারালেন ফিলিপে কুতিনহো?
২০১৩ সালে ইন্টার মিলান থেকে মাত্র ৯ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে যখন কুতিনহো লিভারপুলে আসেন, তখন খুব বেশি আলোচনায় ছিলেন না। কিন্তু অল্প সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন লিভারপুলের জ্বলন্ত আলো। দূরপাল্লার দুর্দান্ত শট, বল কন্ট্রোল আর মাঠের ঘোর পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতায় কুতিনহো তখন লিভারপুলের অনন্য এক অস্ত্র।
তবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ফুটবল দুনিয়ায় এক বড় ঘটনা ঘটে। কৌতিনহো বার্সেলোনায় যোগ দেন ১৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে—যা ছিল ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি। আর এই ট্রান্সফার ছিল মূলত নেইমারের শূন্যতা পূরণের একটি বড় পদক্ষেপ।
২০১৭ সালে নেইমার যখন বিশ্বরেকর্ড দামে পিএসজিতে যোগ দেন, তখন বার্সা ভেঙে পড়েছিল। মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারের সেই বিধ্বংসী ত্রয়ীর জায়গা পূরণে ক্লাবটির প্রধান প্রত্যাশা ছিল কৌতিনহো।
বার্সার সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন ধীরে ধীরে পরিণত হয় হতাশায়। কৌতিনহো বার্সেলোনায় নিজের আসল জায়গাটা খুঁজে পাননি কখনোই। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হয়ে লেফট উইংয়ে যেমন খেলতে বাধ্য হয়েছেন, তেমনই খেলেছেন নানা পজিশনে। কিন্তু কোথাও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। ১০৬ ম্যাচে করেন ২৮ গোল, আর মাত্র ১৩ অ্যাসিস্ট।
২০১৯-২০ মৌসুমে ধারে খেলেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানেও পুরোপুরি নিজেকে খুঁজে পাননি। তবে মজার ব্যাপার ছিল ২০২০ সালে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলা সেই ম্যাচে, যখন বার্সার জালে ৮ গোল দেয় বায়ার্ন—সেই ম্যাচে কুতিনহো নিজেই করেন ২ গোল ও ১ অ্যাসিস্ট!
ফিরে এসে আবারও জায়গা হারান বার্সা দলে। ধারে যান অ্যাস্টন ভিলায়, পরে স্থায়ীভাবেই যোগ দেন ইংলিশ ক্লাবটিতে। কিন্তু ফর্মহীনতা আর আত্মবিশ্বাসের অভাবে তিনি আর পুরনো কুতিনহো হয়ে উঠতে পারেননি।
একসময় বিশ্ব ফুটবলে আলোড়ন সৃষ্টি করা কৌতিনহো ২০২৪-এ ভাস্কো দা গামায় মাত্র ৭.৫০ মিলিয়ন ইউরোতে খেলছেন ধারে, অ্যাস্টন ভিলা থেকে। সেই মেয়াদও শেষ—এখন অনিশ্চিত তাঁর পথ।
একসময় যার মূল্য ছিল ১৩৫ মিলিয়ন ইউরো, মাত্র চার বছরের ব্যবধানে দামটা নেমেছে দশেরও নিচে। আর যার শুরুটা লেখা হয় রেকর্ড দামে যাওয়া বার্সেলোনা থেকেই। নেইমারের রিপ্লেসমেন্ট হতে গিয়ে বনে গিয়েছেন নিজের ছায়া। নিয়তি বুঝি একেই বলে, নিয়তি হয়তো এভাবেই লেখা হয়।