পরপর দু’দিন ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে খেলতে হবে, ভারত ও পাকিস্তানের মত দুই পরাশক্তির বিপক্ষে। ঠিক কতটা যুক্তিসংগত এমন সূচি? এশিয়া কাপে সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে চার উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে লিটন দাসের দল।
কিন্তু সেই সম্ভাবনার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা যেন খোদ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। রীতিমত বিমাতাসুলভ আচরণে বলির পাঠা হতে চলেছে বাংলাদেশ। সুপার ফোরে ওঠা প্রতিটা দলই নিদেনপক্ষে একদিনের বিশ্রাম পাচ্ছে নিজেদের প্রতিটি ম্যাচের আগে। যেমন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর, ২২ সেপ্টেম্বর একদিনের বিরতি। সেদিন থাকছে না কোন ম্যাচ।
এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। ঠিক তার পরের দুই দিন দুই ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের মত বড় এক টুর্নামেন্টে পরপর দুইদিন এমন শক্ত প্রতিপক্ষকে সামলে নেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর শ্রীলঙ্কা দুইদিন বিরতি দিয়ে এরপর খেলতে নামবে ভারতের বিপক্ষে।

বাকি দুই দল দু’টো ম্যাচের মধ্যে নিদেনপক্ষে একদিন পাচ্ছে নিজেদের কর্ম পরিকল্পনা সাজিয়ে নেওয়ার। বাংলাদেশের সাথেই কেন এমন স্বেচ্ছাচারি ব্যবহার? প্রথমত আরব আমিরাতের তপ্ত গরমের কারণে ম্যাচ শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আয়োজকদের নিশ্চয়ই মাথায় আছে, তাপমাত্রার প্রভাব ঠিক কতটুকু।
ওমন বৈরি পরিবেশে একটা ৪০ ওভারের ম্যাচ খেলোয়াড়দের সমস্তটুকু শুষে নেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মত উত্তেজনাকর লড়াইয়ে স্নায়ুচাপের মাত্রা নিশ্চয়ই হয় আকাশচুম্বী। সেই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের জন্যে মাথার ঘাম পায়ের পড়বে অনর্গল। এমন একটি ম্যাচ খেলার পরদিন ভারত নেবে বিশ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশকে আবারও নেমে যেতে হবে মাঠে।
সামলাতে হবে আবার পাকিস্তানকে। আগের দিনের ভুলত্রুটি, জয়-পরাজয়ের কারণ খোঁজার সময়টুকুও পাচ্ছে না বাংলাদেশ। মানসিকভাবে এক ম্যাচ থেকে আরেক ম্যাচের জন্যে প্রস্তুত হওয়ার পর্যাপ্ত সময়ও মিলবে না লিটন দাস ও তার সতীর্থদের। এখন অনেকেই সামনে নিয়ে আসতে পারেন- ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট তো এভাবেই হয়।

অবশ্যই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ম্যাচের সংখ্যা থাকে বেশি। একটা দলে পর্যাপ্ত ব্যাকআপ খেলোয়াড় রাখার সুযোগ থাকে। তাছাড়া ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে জাতীয়তাবাদ বা স্বদেশ প্রেমের বিষয়টি ততটাও গুরুত্ব পায় না। সুতরাং একজন খেলোয়াড় জাতীয় দলে ঠিক যতটুকু নিজেকে নিঙড়ে দেন, ততটুকু দেন না ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে- সে বিষয়ের সাথে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ নেই।
একজন খেলোয়াড় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দেন, সেটা মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই। এমন পরিস্থিতির পর আরও একটা ম্যাচের জন্যের প্রস্তুত হওয়ার জন্যে নূন্যতম বিশ্রাম প্রয়োজন। সেই বিশ্রাম থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ। এ কথা সত্য যে বি গ্রুপ থেকে যে দলই বাংলাদেশের পরিবর্তে সুপার ফোরে উঠত, তাদেরই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য হতো। সে কারণেই সুপার ফোরের শেষ দুই ম্যাচের আগে অন্তত আরেকদিনের বিরতি বাড়াতে পারত এসিসি। তাতে করে টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য একদিন বেড়ে যেত, তবে সেটায় তো খুব বেশি লোকসানের কিছু তো থাকার কথা নয়। শুধু খেলোয়াড়দের ব্যবহার করে বাণিজ্যের চিন্তাতে এমন বৈরি আচরণ আয়োজকদের। খেলোয়াড়দের দিকটা ভাববার যেন নেই কেউ।

বরাবরই অভিযোগ ওঠে এশিয়া কাপ আয়োজিত হয় মূলত ভারত-পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের এমন অবান্তর ও অযৌক্তিক সূচি যেন সেই অভিযোগের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার শামিল। এমন বিমাতাসুলভ আচরণ থেকে মুক্তি আদোতে মিলবে কি-না তা অন্তত জানা নেই। তবে, এশিয়া বাকি দলগুলোর উচিত আওয়াজ তোলা। নতুবা নিষ্পেষিত হতে হতে, সকল সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটবে স্রেফ বিশেষ দুই দলকে সুবিধা দিতে গিয়ে।











