মাত্রই ইনিংস ব্রেকটা শেষ হয়েছে। ইনিংসের দ্বাদশ ওভার চলমান। পাকিস্তানের ডাগআউট থেকে নিশ্চয়ই হাতখুলে ব্যাট করবার নির্দেশ এসে গিয়েছে। আগের ওভারেই ১৬ রান নিয়েছেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। ঠিক তখন মারমুখী পাকিস্তানের দুই ব্যাটার বাবর আজম ও শান মাসুদের জুটি খানিকক্ষণ টিকে গেলেই পাকিস্তানের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যেতে পারত ১৬০ রানের গণ্ডি। তবে না আদিল রশিদ তা হতে দিলেন না।
আর ঠিক সেখানেই পাকিস্তানের পরিকল্পনা ওলট-পালট হতে শুরু করে। পাকিস্তানের সাথে একটা সম্পর্ক কিন্তু এই আদিল রশিদের রয়েছে। তিনি পাকিস্তান বংশদ্ভুত। পাকিস্তানকে খানিকটা হলেও তো নিজের মধ্যে ধারণ করেন তিনি। তবে সে সবের উর্ধ্বে ক্রিকেট। তিনি গায়ে জড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের থ্রি লায়ন্স খচিত জার্সি। ঠিক এখানেই পেশাদারিত্বটা ফুটিয়ে তুলতে হয়। আদিল রশিদ সে কাজটাই যেন নিবেদিত মনে করে গিয়েছেন।
পৃথিবীর ভূস্বর্গ বলা হয় কাশ্মিরকে। সেই স্বর্গ আবার তিন ভাগে বিভক্ত। পাকিস্তান নিজেদের দখলে রেখেছে একটি অংশ। সে অংশেই রশিদদের পৈত্রিক নিবাস। তবে ১৯৬৭ সালের দিকে তাঁর পরিবার চলে যায় ইংল্যান্ডে। সেখানেই জন্মেছিলেন রশিদ। ইয়র্কশায়ারে ১৯৮৮ সালের দিকে ভূমিষ্ঠ হন রশিদ। পারিবারিকভাবে তিনি স্থানীয় পাকিস্তানি কমিউনিটির সাথেও যুক্ত রয়েছেন। তবে খেলার মাঠে তিনি কেবলই একজন ইংলিশ ক্রিকেটার। তিনি ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতেই নেমেছেন মেলবোর্নের সবুজ ঘাসে।
২০১৯ সালের মত আরও একটি শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠার প্র্যত্যয়ে নিশ্চয়ই তিনিও উজ্জীবিত। তাইতো পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে বিন্দুমাত্র সুযোগ দেননি রশিদ। নিজের কৌশল আর পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নেই দিয়েছেন পূর্ণ মনোযোগ। তাইতো দিনশেষে নিজের নামের পাশে দুইটি উইকেট দেখতে পাচ্ছেন রশিদ। তবে দুইটি উইকেটই ম্যাচের গতিপথটা নির্ধারণ করে দিয়েছে অনেকটাই। বাবর আজমকে ফেরানো ছাড়াও তিনি প্রথম উইকেট হিসেবে শিকার করেন মোহাম্মদ হারিসকে। এই হারিস যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন সেটা তো কারোই অজানা নয়।
সেমিফাইনালের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাবর আজম ফিরেছিলেন নিজের ছন্দে। ফাইনালের দিনও তিনি ছিলেন নিজের ছন্দে। ক্রমশ রানের চাকা সচল রাখছিলেন। মাঝে মধ্যে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে মুহাম্মদ হারিস মূলত ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারেন বলেই, অল্প সময়ের মধ্যে বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছেন। এমন দুইজন ব্যাটারের উইকেট নিশ্চয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণই ছিল ইংল্যান্ডের জন্য। আর দলের প্রয়োজনের সময়ই নিজেকে মেলে ধরলেন রশিদ।
এই দুই দরকারি উইকেট শিকার করা ছাড়াও তিনি ছিলেন যথেষ্ট মিতব্যয়ী। ৫.৫০ ইকোনমি রেটে তিনি রান খরচ করেছেন কেবল ২২ টি। আর তাছাড়া দ্বাদশ ওভারে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মেইডেন নিয়ে পাকিস্তানকে ভীষণরকম বিপদে ফেলে দেন রশিদ। তাঁর এই অনবদ্য বোলিং পারফরমেন্সের কারণেই শিরোপা জয়ের ফারাকটা খুব বেশি হতে পারেনি ইংলিশদের। এরপর গল্পটা তো আর নতুন করে বলে দেওয়ার নয়।
একটা বৈশ্বিক আসরের ফাইনাল ম্যাচে, রাজ্যের শত চাপ এসে ভর করে মাথায়। সে সাথে আবেগও তো আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ধরে। এমন পরিস্থিতিতে স্নায়ুচাপ সামলে পারফর্ম করতে সবাই পারে না। আর যারা পারে তারাই তো দিন শেষে চ্যাম্পিয়ন।