একটু ধ্রুব স্বস্তি

জাতীয় দলের সতীর্থ শেখ মেহেদী হাসানকে মিড অনের উপর দিয়ে একটি চার মারলেন। পরের বলেই আবার বড় একটা গ্যাপের দিকে বলটা আলতো করে ঠেলে দুই রানের জন্য দৌড়। পাওয়ার প্লে ও মাঠের ফাঁকা জায়গা গুলোর পুরোদস্তুর ব্যবহার। কোন পাওয়ার হিটিং নেই, বাড়তি রিস্ক নেয়ার বালাই নেই। শুধু হাতের মোচড়ে স্কোরবোর্ডটাকে সচল রাখা। এটাই তো আফিফ হোসেনের স্পেশালিটি।

ব্যাট হাতে সময়টা ঠিক ভালো যাচ্ছিল না। এই অফ ফর্মটা বয়ে চলেছেন সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই। যদিও এর আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। মিরপুরের মন্থর ও টার্নিং উইকেটেও মোটামুটি প্রতি ম্যাচে ভালো স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। ফলে বিশ্বকাপে তাঁর উপর বড় প্রত্যাশার চাপই ছিল। তবে বাংলাদেশ দলের মত হতাশ করেছিলেন আফিফও।

এরপর বিপিএলেও শুরুটা ভালো হয়নি। ঢাকা পর্বে তাঁর দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ভালো ক্রিকেটই খেলেছে। তবে আফিফ হোসেন তিন নম্বরে নেমে তাঁর ক্যারিশমাটা দেখাতে পারছিলেন না। ঢাকায় তিন ম্যাচে করেছেন যথাক্রমে ৬, ১২ ও ১৫ রান। যদিও গতবছরের শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচেই রান পেয়েছিলেন  তবে সেই ইনিংস গুলোতে ঠিক আফিফের ছোঁয়াটা পাওয়া যাচ্ছিল না।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দারুণ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেন আফিফ। এমন না যে গায়ের জোরে খেলার চেষ্টা করেন। কিংবা আফিফ স্লগারও নন। আফিফ মূলত প্রপার ব্যাটসম্যান। টাইমিং ও কব্জির কাজই তাঁর মূল শক্তি। তাঁর আরেকটা বড় শক্তি ক্রিকেটটা বোঝা। ম্যাচের যেকোন পরিস্থিতিতেই আফিফ স্কোরবোর্ড সচল রাখবেন।

তিনি বোলারের পেস ব্যবহার করেন, বড় মাঠটার গ্যাপগুলো ব্যবহার করেন। বাঝে বল পেলে বাউন্ডারিও মারতে জানেন, তবে ভালো ভল গুলোতে ফাক গলিয়ে সিঙ্গেল, ডাবল বের করাতেই তাঁর স্পেশালিটি। ফলে যেকোন পিচে, যেকোন পরিস্থিতেই আফিফের ব্যাটে রানটা আসে তাঁর নিজস্ব গতিতেই। সেই পুরনো আফিফকেই আজ অনেকদিন পর খুঁজে পাওয়া গেল চট্টগ্রামে।

ঢাকা পর্বে দুই জয় তুলে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজেই ঘরের মাঠে গিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সেখানেই খুঁজে পাওয়া গেল চেনা আফিফকে। পাওয়ার প্লে টা দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। উইল জ্যাকসের সাথে দারুণ একটি পার্টনারশিপ করেছেন। এরপর একপ্রান্ত থেকে যখন মিরাজ, বেনি হাওয়েলরা আউট হয়ে যাচ্ছিলেন তখনো আরেকপ্রান্ত থেকে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন।

তাঁর ৩৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংসেই একটা লড়াকু সংগ্রহের দিকে হাঁটতে পেরেছে চট্টগ্রাম। ১১৮.৯১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা এই ইনিংসে ছিল ৩ টি চার ও ২ টি ছয়। আর বাকি রান করেছেন সিঙ্গেলস কিংবা ডবলস থেকে। উইকেট, আরেকপ্রান্ত থেকে অন্য ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যাওয়া কোন কিছুই তাঁকে আঁটকে রাখতে পারেনি।

বিপিএলে এই আফিফের এই ফিরে আসাটা জরুরি ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জন্যও। কেননা তাঁদের ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভের মত আছেন এই ব্যাটসম্যান। তাঁর কাছ থেকে রান না আসলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা বাড়তি চাপ তৈরি হয়। সবশেষে আফিফের রানে থাকাটা আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও জরুরি।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলেরও গুরুত্বপূর্ন ব্যাটসম্যান আফিফ। আর বিপিলের পর থেকে টানা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সামনেই আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফলে এই সময়ে আফিফের রানে ফেরাটা জরুরি ছিল আফিফের জন্য, চট্টগ্রামের জন্য ও বাংলাদেশের জন্যেও।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link