সঠিক মূল্যায়নে ‘সেরা’ আফিফ

সিঙ্গেল নিয়ে নিজের অর্ধশতকটা পূরণ করলেন। সময় উপযোগী ও কার্যকর ইনিংস বটে। তবে আফিফ হোসেন ধ্রুব যেন এইসব নিয়ে একটুও ভাবছেন না। বেশ খানিকক্ষণ পর ব্যাটটা উচিয়ে ধরলেন। মুখ দেখেও বোঝার উপায় নেই যে কিছু একটা অর্জন করলেন। হয়তো সংযুক্ত আরব-আমিরাতের বিপক্ষে পাওয়া এই রান গুলোকে আফিফ শুধুই নিজের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখলে বোঝার উপায় নেই খেলাটা যে আরব আমিরাতের বিপক্ষে।

এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মান। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করেছেন এই দুজনই। তবে ওপেনিং সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। সাব্বির রহমান ফিরে গিয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। এছাড়া মিরাজ, লিটন, ইয়াসির রাব্বি কেউই রানের দেখা পাননি। মাত্র ৪৭ রানেই চার উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা বাংলাদেশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলারদের বিপক্ষেও যেন বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ। তবে একজন বাইশ গজ আগলে রেখে দাঁড়ালেন। অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতা ঢাকার দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন। আজ আবার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন নিজের প্রাপ্য জায়গাটায়। আফিফও আরেকবার দেখালেন বাইশ গজে সময় পেলে তিনি কী করতে পারেন।

আফিফকে উপরে খেলানোর কথাটা ক্রিকেট পাড়ায় অনেক দিনের দাবি। লম্বা একটা সময় বাংলাদেশ আফিফকে ছয়-সাতে খেলিয়ে অপচয় করেছে। আগের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তাঁকে বিবেচনা করতেন স্লগার হিসেবেই। তবে সেটা যে ভুল ধারণা তা আফিফ নানা ফরম্যাটে নানা ভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

দেরিতে হলেও আফিফকে উপরে খেলানোর গুরুত্বটা বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছে। এমনকি এবার এশিয়া কাপ খেলতে যাবার আগে টিম ডিরেক্টির স্বয়ং ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছিলেন। খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন এশিয়া কাপে আফিফ ব্যাট করতে নামবে চারে। এবার বুঝি আফিফের পুরোটা বাংলাদেশ পাবে।

তবে মাঠে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এশিয়া কাপের দুই ম্যাচেই চারে ব্যাটিং করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিককে জায়গা দিতে গিয়ে আফিফ খেলেন পাঁচে। তবে এখন আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুশফিক নেই। অবশেষে চারে খেলার সুযোগ পেলেন আফিফ। আর উপরে ব্যাট করার সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগালেন তিনি।

অন্য ব্যাটসম্যানরা যখন নিজেদের উইকেট দিয়ে এসেছেন তখন তিনি ইনিংস গড়ে তোলার দায়িত্ব তুলে নিলেন। এরপর ধীরে ধীরে নিজের হাত খুলে মেরেছেন। শেষ নুরুল হাসান সোহানের সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে অন্তত সম্মানজনক একটা স্কোর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। নিজের এই ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৭ টি চার ও ৩ টি ছয় দিয়ে। ব্যাটিং করেছেন ঠিক ১৪০ স্ট্রাইক রেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে আফিফের সর্বোচ্চ ইনিংসও এটিই।

অবশ্য চার নাম্বারে নামলেই জ্বলে উঠে আফিফের ব্যাট। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই নিয়ে সাত বার চার নাম্বারে ব্যাট করতে নামলেন আফিফ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচেও ব্যাট করেছিলেন চারে। সেদিন অবশ্য শূন্য রান করেই ফিরেছিলেন।

তবে এরপর চার নাম্বারে খেলা ছয় ইনিংসে তাঁর স্কোর গুলো যথাক্রমে ৩৬, ২০, ২০, ৫০, ৩০* এবং ৭৭*। ফলে চারে খেলা এই ছয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২৩৩ রান। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে  চারে নামা আফিফের ব্যাটিং গড় ৪৬.৬৬। আর আরব আমিরাতের বিপক্ষে কোনোমতে যে বাংলাদেশ জিতে গেল তাতে কিন্তু বড় অবদান ওই আফিফেরই। তবুও কী চারে আফিফের জায়গাটা পাকা হবে? নাকি আবার ভিন্ন কোন অজুহাতে তাঁকে পাঠিয়ে দেয়া হবে ছয় সাতে?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link