লিটন-আফিফ জুটিতেই ওপেনিং ধাঁধার সমাধান

একটা চমক কিন্তু ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সবাই হয়ত প্রত্যাশাই করেছিল লিটনের সাথে ওপেনিংয়ে নামবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেটাই ছিল অনুমিত। কেননা দলে স্বীকৃত টপ অর্ডার ব্যাটার বলতে একমাত্র শান্তই ছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওপেনিংয়ে এলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।

একেবারে নতুন এক ওপেনিং জুটি। তবে তা লাল-সবুজ জার্সিতে। এর আগে অবশ্য এই জুটি একবার ইনিংসের উদ্বোধন করেছিল। তবে সেটা ছিল ২০২০ সালে হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএল টি-টোয়েন্টির আসর। সেবার রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে খেলেছিলেন লিটন ও আফিফ। ১২টি ম্যাচে এই জুটি ব্যাটিং ইনিংসের সূচনা করেছিল।

বেশ সফল এক জুটিই ছিল বলা চলে। এই জুটির উপর ভর করেই রাজশাহী জিতেছিল নিজেদের প্রথম শিরোপা। যদিও সেই আসর নিয়ে ছিল নানা বিতর্ক। কেননা খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের অধীনে রেখেছিল সবগুলো দলের মালিকানা। তাতে অবশ্য খেলোয়াড়দের মানে কমতি হয়নি।

বাঘা-বাঘা সব খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিল সেবারের আসরে। যেমন রাইলি রুশো, মোহাম্মদ আমির, মুজিব-উর রহমানদের মত ভিনদেশী মানসম্মত খেলোয়াড়রা যেমন খেলেছেন, তেমনি দেশের সব তারকা খেলোয়াড়রাই অংশ নিয়েছিলেন। এত এত তারকাদের ভীরে সেবার উদ্বোধন করতে এসে দারুণ সময়ই পার করেছে লিটন-আফিফ জুটি।

লিটন ছিলেন সে আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, আফিফের অবস্থান ছিল আট নম্বরে। লিটন প্রায় ৩৩ গড়ে ৪৫৫ রান করেছিলেন, অন্যদিকে আফিফ করেন ২৬.৪২ গড়ে ৩৭০। এখানেই আলোচনার শেষ নয়। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে এই জুটির সফলতা।

নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে প্রথমবারের মত আফিফ ও লিটন উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন। এর আগে রাজশাহীর শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। পাওয়ার প্লে-তে উইকেট হারানোসহ, স্লথ গতিতে রান উঠেছে। কিন্তু আফিফ-লিটনের জুটির পর বদলে যেতে থাকে চিত্রপট। এই দুইজনে মিলে রাজশাহীর হয়ে ১২টি ম্যাচে ব্যাটিং শুরু করেন।

যার মধ্যে পাওয়ারপ্লেতে নিদেনপক্ষে ৫০ রান এসেছে ৬ বার। আর সে ছয়বারই দল জিতেছে ম্যাচ। সুতরাং এই জুটির সফলতার হার ধরা যেতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ। যেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুরুর দিকের ওভারগুলোতেই রান তুলতে হয় দ্রুতগতিতে। কেননা ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের কারণে বেশ ফাকা জায়গা তৈরি হয়। আর লিটন এবং আফিফ দু’জনই সেই জায়গাগুলো বেশ ভালভাবেই ব্যবহার করতে জানেন।

যার উদাহরণ তো আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মিলেছে আরও একবার। সে যাত্রায় রাজশাহী দলটা তাদের খেলা ১৫ ম্যাচের মধ্যে ১০টিতেই জয়ের দেখা পেয়েছে। যার ছয়টিতেই ওপেনিং জুটির অবদান ভুলে যাওয়ার নয়।

তবে কি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও এই জুটিই হতে পারে সমাধান? হয়ত হতে পারে। তবে সেটা কেবলই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নয়। বরং ওয়ানডে ক্রিকেটেও হতে পারে। এমনকি এই জুটি হয়ত হতে পারে সফলতম জুটি। প্রথমত লিটন দাস সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের এখন প্রথম পছন্দের ওপেনার। শূন্যস্থান শীঘ্রই ফেলে যাবেন তামিম ইকবাল খান।

তার শূন্যস্থান পূরণের জন্যে এখনও ভাল মানের একজন ওপেনার খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। সেদিক থেকে আফিফ নিঃসন্দেহে হতে পারেন একজন বিকল্প। কেননা আফিফ ঘরোয়া ক্রিকেটে টপ অর্ডারে খেলতেই পছন্দ করেন। বেশ জোর গুঞ্জন আছে সদ্যই দল থেকে বাদ পড়ার পেছনে আফিফের টপ অর্ডারে খেলার ইচ্ছেই ছিল কারণ। যদিও অফফর্মকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

তাছাড়া আফিফ এসে মারকাটারি ব্যাটিং করতে জানেন না। তিনি বরং একটু রয়েসয়ে, ফিল্ডিংয়ের ফাঁকফোকর গলে রান তুলে নিতে পারেন অনায়াসে। সেই সাথে রানিং বিটুউইন দ্য উইকেটও বেশ ভাল তার। তাইতো সাদা বলের ইনিংসের শুরু দিকে রানের চাকা সচল রাখা বা দ্রুত রান তোলা, দুই কাজই করতে পারবেন হয়ত আফিফ হোসেন।

তাছাড়া লোয়ার মিডল অর্ডারে ক্রমাগত ব্যর্থই হয়েছেন তিনি। যে কয়েকটি মনে রাখার মত ইনিংস রয়েছে তার, সেগুলোর অধিকাংশতেই সময় পেয়েছেন তিনি। নিজের ইনিংস বিল্ডআপ করেছেন। বাংলাদেশের তরী ভিড়িয়েছেন জয়ের বন্দরে। সুতরাং, তার সেই সামর্থ্য রয়েছে দলকে ক্যারি করবার।

তবে আফিফের সমস্যাও রয়েছে। তিনি কোন এক অজানা কারণে নিজের শরীরের নিচের দিকটা, অর্থাৎ পা এবং কোমড়ের অংশ বাঁকাতে পারেননা। যে কারণে শর্ট বল খেলতে বেশ খাবি খেতে হয় তাকে। সেটাই তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। ওপেনিংয়ের ক্ষেত্রেও তার প্রধান অন্তরায়। কারণ তাকে যে শুরুতে সামলাতে হবে আগ্রাসী সব পেসারদের। খেলতে হবে বিশ্বের নানাপ্রান্তে।

কিন্তু এই সমস্যা নিশ্চয়ই সমাধান করবার মতই। আফিফ ও টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেই এই সমস্যার সমাধান করা হয়ত সম্ভব। স্রেফ স্বদিচ্ছা থাকা চাই। এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের খেলা নেই। প্রায় ৪৫ দিনের বিশাল বড় এক সময়। চাইলেই আফিফ নিজের এই দূর্বলতার সমাধান করে ফেলতে পারেন। তেমনটা হলে, অন্তত এই যাত্রায় ব্যাকআপ ওপেনারের শঙ্কাটা ঘুচে যেতে পারে।

একজন ওপেনার হিসেবে আফিফের সফলতার স্যাম্পল সাইজ কিন্তু কম নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায়শই ওপেনার হিসেবে খেলে থাকেন তিনি। তাছাড়া রোহিত শর্মার উদাহরণও টেনে আনা যায়। ক্যারিয়ার শুরুতে মিডল অর্ডারে খেলছেন রোহিত। পরবর্তীতে বনে গেছেন বিশ্বসেরা ওপেনারদের একজন। আফিফও হয়ত হতে পারেন তেমন কেউ।

তাছাড়া লিটনের সাথে তার যুগলবন্দী জমেও বেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষেই তো দু’জনে মিলে শুরুর ৬ ওভারে ৫৪ রান তোলেন। এই জুটি ভাঙে ৬৭ রানে। সুতরাং একটু বাক্সের বাইরে থেকে চিন্তা করলে, আফিফ হয়ত ওপেনিং পজিশনের সমাধান হতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link