মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি, আলিস আল ইসলাম এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব। এতগুলো নাম বলার একটাই কারণ আর সেটা হচ্ছে এই তিন ক্রিকেটারের মধ্যে একটা মিল আছে। তাঁরা কোনো লিস্ট এ ম্যাচ বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অংশ নেন। শুরুর দুটো নাম হারিয়ে গেলেও ধ্রুবতারার মত আলোময় পারফর্ম্যান্স করে আজ ক্রিকেট বিশ্বের এক পরিচিত নাম আফিফ হোসেন ধ্রুব।
২০১৬ সালে বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংস এবং রাজশাহী কিংসের মধ্যেকার ম্যাচ ছিল সেটা। ক্রিস গেইল, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আমির, সাব্বির রহমানের মাঝে রাজশাহী দলে হঠাৎ দেখা যায় তখন কার সময়ের অপরিচিত মুখ আফিফ হোসেনকে। ব্যস, দিনটা নিজের করে নিলেন তিনি।
তামিম-গেইলদের মত ব্যাটারদের বিপক্ষে বল করাটাই যেখানে দু:সাহসিক ব্যাপার, সেখানে এই দুই ব্যাটসম্যানের উইকেট সহ গুনে গুনে পাঁচ টি উইকেট নেন ২১ রানের বিনিময়ে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বয়স ভিত্তিক আর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্সের সুবাদে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে দলে ডাক পান। সেবার একাদশে সুযোগ পেলেও অভিষেক টা রাঙাতে পারেননি তিনি।
তবে, আস্থা রেখেছিল বোর্ড। নিজের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে ২৬ বলে অপরাজিত ৫২ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ধারাবাহিক ভালো করার সুবাদে দলে মিডল অর্ডারে প্রায় স্থায়ী হন। ২০২০ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেখানে তার ক্যামিও দলের রান বাড়াতে অবদান রাখছিলেন।
২০২২ সালে ৪৫ রানে ছয় উইকেট হারানোর ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেখা যায় আফিফের আসল চেহারা। মেহেদী মিরাজকে নিয়ে ১৭৪ রানের জুটি করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। সেই ম্যাচে অপরাজিত ৯৩ রান এখন অবধি তার ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস। এরপর থেকে হঠাৎ করে নিজেকেই নিজে খুঁজে ফিরেন নিজেকে। ধারাবাহিক ভাবে বাজে ফর্মের কারণে ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে হওয়া আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে দল থেকে বাদ পড়েন।
ম্যানেজমেন্ট তার উপর ভরসা করেছিল। তবে, শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড সিরিজ অবধি ধারাবাহিক ভাবে বাজে ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন। তাই, প্রথমে একাদশ থেকে বাদ পড়েন, শেষে দল থেকেই ছিটকে যান তিনি। নিজেকে ফিরে পেতে চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আবাহনীর হয়ে খেলছেন নিয়মিত ভাবে। ৫০-এর ওপর গড়, আর ১২০-এর ওপর স্ট্রাইক রেট নিয়ে তিনি ব্যাট করে চলেছেন।ধারাবাহিক ভাবে রান করে যাচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচেই।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হয়তো বাংলাদেশ দলেই এখন অতীত। তবে, আফিফের লড়াইটা এই মুহূর্তে তৌহিদ হৃদয়ের সাথে। আফিফের জায়গায় সুযোগ পেয়ে নিজের একটা শক্ত অবস্থান গড়ে ফেলেছেন হৃদয়। তবে, আফিফও যে ফুরিয়ে যাননি, সেটা প্রমাণ হচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটেই। হয়তো আবার তিনি ফিরে আসবেন নতুন এক ধ্রুবতারা হয়ে।
কোচ হাতুুরুসিংহের জমানায় জাতীয় দলে টিকে থাকতে পারফরম্যান্সটাই শেষ কথা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স নিয়ে আবারও টিম ম্যানেজমেন্টের সুদৃষ্টি ফিরে পেতে পারেন আফিফ। তবে, সেই রাস্তাটা কঠিন। কঠিন সেই পথ আফিফ পাড়ি দিতে পারেন কি না এখন সেটাই দেখার বিষয়ক।