ডেভিড ফির্থ একটি বই লিখেছিলেন, ‘সাইলেন্স অব দ হার্টস-ক্রিকেট সুইসাইড’। তাঁর অনলাইন সংস্করণ (আসল বইটি বোধহয় ভারতে পাওয়া যায় না, বই আকারে) পড়তে গিয়ে প্রথম জেনেছিলাম ভদ্রলোকের নাম। ভদ্রলোকের কিছু অনবদ্য রেকর্ড রয়েছে। তার বেশিরভাগটাই লর্ডস কে ঘিরে।
লর্ডসের এতো বছরের ইতিহাসে আজ অবধি ইনি ছাড়া আর কেউ বল প্যাভিলিয়নের ওপারে মারতে পারেননি। মন্টি নোবেল এর বোলিংয়ে ১৮৯৯ সালে এমসিসি বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তিনি এই কাণ্ডটি ঘটান। এর বছর আটেক পর, তখন অবশ্য তাঁর ফর্ম বেশ পড়তির দিকেই, তিনি সমারসেটের বিরুদ্ধে একই ইনিংসে দুবার হ্যাটট্রিক নেন।
তার মধ্যে একবার ৪ বলে ৪ উইকেট। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে একই ইনিংসে দুটি হ্যাটট্রিক দুবারই হয়েছে। পরের ঘটনাটি এর ৫৭ বছর বাদে, জে.এস. রাও নিয়েছিলেন সার্ভিসেসের হয়ে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে। আদতে তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার। জীবনে পাঁচটি টেস্ট খেলেছেন, তার তিনটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, ও দুটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ইংল্যান্ডের হয়ে।
১৮৯৪-৯৫ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ শুরু হয় সিডনিতে, ফলো-অন খাবার পর টেস্ট জয়ের প্রথম ঘটনাটি দিয়ে। ঘটায় ইংল্যান্ড। সেই সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক করেন তিনি। কিছুটা রাউন্ড আর্ম বোলিং অ্যাকশন ছিল তাঁর। সাথে ব্যাট হাতেও দারুণ।
এবং ফিল্ডিং টা জমিয়ে করতেন তিনি। তাঁর বোলিং নিয়ে ফির্থ লিখেছেন, দুটি বল প্রায় কখনোই এক গতিতে করতেন না তিনি। গতির হেরফের টাই তাঁর বোলিংয়ের অস্ত্র। তাঁর নাম আলবার্ট ট্রট। স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এই ট্রট। তবুও তাঁর কাহিনী বিয়োগান্ত।
১৮৯৬ সালে তাঁর দাদা হ্যারি ট্রটের নেতৃত্বে যে দল ইংল্যান্ড যায়, সেই দলে কোনো অজ্ঞাত কারণে জায়গা হয়নি আলবার্টের। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলার। প্রচন্ড জনপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন। দর্শকদের সাথে নাকি তাঁকে খুনসুটি করতেও দেখা যেত সেই সময়ে। তখন তো আর উগ্রপন্থী, নিরাপত্তা, কালাশনিকভ, কোভিড এসবের সাথে বিশ্বের পরিচয় ছিল না, তাই দর্শকদের গ্লাস থেকে নিয়েই দিব্যি এলে চুমুক লাগাতেন। এল পান করতে খুব ভালোবাসতেন তিনি।
কিন্তু, এই অনুরাগের ফলেই তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে লাগলো। ড্রপসির রোগী হয়ে যান তিনি। ১৯১০ সালে ক্রিকেট ছেড়ে আম্পায়ারিং শুরু করেন। কিন্তু কোথাও গিয়ে, একটা অপ্রাপ্তি যেন ট্রটকে গ্রাস করেছিল।
তখনকার দিনে বোধহয় ডিপ্রেশন নামক ব্যাপারটা এতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এর জন্যে যে ওষুধ খেতে হয়, সে ধারণাও বোধহয় ছিল না। ট্রট সেই ডিপ্রেশন ও অর্থকষ্টের মধ্যে নিজের শেষ কয়েকবছর কাটিয়েছেন। লন্ডনের উইলেস্ডেন গ্রিনে একটি ছোট বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি।
তাঁর সম্পত্তি বলতে ছিল ওয়ার্ডরোবে কিছু জিনিস এবং ৪ পাউন্ড। লন্ড্রি টিকিটের পিছনে সেসব লিখে দিয়ে যান তাঁর বাড়ির মালকিন কে। অত:পর নিজেকে গুলি করেন। ১৯১৪ সালের ৩০ জুলাই। এর ঠিক একশো বছর পর আরেক ট্রট, জনাথন, এই ক্রিকেট জনিত ডিপ্রেশনের কারণে খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। জোনাথনের ক্ষেত্রে কত রকম আধুনিক ওষুধের সুবিধা তিনি পেয়েছেন, তাই শুধু ক্রিকেট ছাড়া পর্যন্তই ডিপ্রেশনের প্রভাব সীমিত ছিল। আলবার্টের ক্ষেত্রে এই ডিপ্রেশন হয়ে যায় মৃত্যুর দূত।