পরপর দু’টো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপার খুব কাছে থেকেই ফিরতে হয়েছে পাকিস্তানকে। ২০০৯ আসরের চ্যাম্পিয়ন দলটা, এত কাছ থেকে শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এর আগেও অবশ্য এমনটা ঘটেছে। ২০১০ ও ২০১২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে পাকিস্তানকে। তিন দফা সেমিফাইনাল ও দুই দফা রানার্সআপ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দলটি।
একমাত্র দল হিসেবে ছয় বার নক আউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে দলটি। তাদের ধারাবাহিকতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলকে সফলই বলা চলে। তাইতো চাইলেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের সর্বকালের সেরা একাদশ সাজিয়ে ফেলা যায়। যদিও আসছে দিনে এই একাদশে আসতে পারে আমুল পরিবর্তন।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান যাত্রা শুরু করেন। এরপর পাকিস্তানের হয়ে ১৩টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। ১২০ স্ট্রাইকরেটে ৪৫৬ রান করেছেন। চারটি অর্ধশতক রয়েছে তার নামের পাশে। ৪১.৪৫ গড়ে পাকিস্তানের আর কোন ওপেনার রান করেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
- ইমরান নাজির
রিজওয়ানের ঠিক ভিন্ন চরিত্রের ব্যাটার ছিলেন ইমরান নাজির। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তিনি ২০০৭ ও ২০১২ তে পাকিস্তানকে এনে দিতে পেরেছিলেন দুরন্ত সূচনা। ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ঠিকঠিক ৩০০ রান করেছেন তিনি। সর্বকালের একাদশে রিজওয়ানের পাশে তার জায়গা হওয়াটাই যথাযথ। তাতে করে ওপেনিংয়ে রইবে ভারসাম্য।
- কামরান আকমল (উইকেট রক্ষক)
পাকিস্তানের হয়ে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন কামরান। রান কিংবা স্ট্রাইক রেট বিচারে তার ভাই উমর আকমাল একাদশে জায়গা পেতে পারতেন। তবে উইকেটের পেছনে তার মত সুদক্ষ যে পাকিস্তানে নেই দ্বিতীয় কেউ। ১১৫ এর একটু বেশি স্ট্রাইক রেটে ৫২৪ রান করেছেন কামরান। আর উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ৩০ জন ব্যাটারের আউটের অংশীদার হয়েছেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটেও এই পরিসংখ্যানে তিনি দ্বিতীয়।
- শোয়েব মালিক
শহীদ আফ্রিদির সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছেন শোয়েব মালিক। তার নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে রানার্স আপ হয়েছিল পাকিস্তান। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি। ১২৩.২৮ স্ট্রাইক রেটে ৬৪৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। খেলেছেন ৩৪টি ম্যাচ।
- ইউনুস খান (অধিনায়ক)
পাকিস্তানকে একমাত্র শিরোপা এনে দেওয়ার নায়ক ইউনুস খান। তার নেতৃত্বেই ২০০৯ সালে শিরোপা নিয়ে উল্লাস করেছিল পাকিস্তান। সেই আসর সহ মোটে দুইটি আসরে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস। তাতে ১৩ ইনিংস ব্যাট করে ২৯৯ রান সংগ্রহ করতে পেরেছলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
- মিসবাহ উল হক
প্রথম আসরে নির্ভীক এক ব্যাটার হিসেবেই নিজেকে পরিচয় করিয়েছিলেন মিসবাহ উল হক। সে আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। এছাড়া মোট তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৭ ইনিংসে ব্যাট হাতে তিনি নেমেছিলেন বাইশ গজে। ১২৪.৩২ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৮ রান রয়েছে তার নামের পাশে।
- শহীদ আফ্রিদি
শহীদ আফ্রিদিকে ছাড়া পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ কল্পনা করা অসম্ভব। বিশ্বকাপের একাদশের ক্ষেত্রেও সে কথা খাটে। বিশ্ব জুড়ে তার খ্যাতি ছিল মারকুটে এই ব্যাটারের। পাকিস্তানের হয়ে ৩৪টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছেন। ৫৪৬ রান করেছেন তিনি ১৫৪ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৩৯ খানা উইকেট রয়েছে তার ঝুলিতে।
- শাহীন শাহ আফ্রিদি
পাকিস্তানের বর্তমান পেস আক্রমণের সেনাপতি শাহীন শাহ আফ্রিদি। এমনকি ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি গোটা দলকেই নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। বা-হাতি এই পেসার পাকিস্তানের হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। নামের পাশে রয়েছে তার ১৮ খানা উইকেট। তাছাড়া ব্যাট হাতেও ক্যামিও খেলবার দক্ষতা রয়েছে তার। সেদিক বিবেচনায় তিনি জায়গা পাচ্ছেন এই একাদশে।
- উমর গুল
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উমর গুলের উইকেট সংখ্যা ৩৫টি। পাকিস্তানি পেসারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তাছাড়া সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় তার অবস্থান তিন নম্বরে। ডানহাতি এই পেসার ২৪টি বিশ্বকাপ ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিধিত্ব করেছেন সবুজ জার্সিধারীদের।
- সাইদ আজমল
দুসরার রাজা হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয় সাইদ আজমলকে। ডানহাতি স্পিন ঘূর্ণিতে তিনি কাবু করতেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। বেশ ধূর্ত প্রকৃতির এই বোলার পাকিস্তানের হয়ে ৩৮ টি উইকেট শিকার করেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। খেলেছেন ২৩ খানা ম্যাচ। চাকিং বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে তাকে একাদশে জায়গা তাই করেই দিতে হয়।
- হারিস রউফ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানি পেসারদের সফলতার প্রায় একইরকম। তাইতো হারিস রউফকে রাখা হয়েছে এই একাদশে। তবে মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফদের মত বোলারাও থাকতে পারতেন। কিন্তু পরিসংখ্যান পুরোদস্তুর রউফের পক্ষে। বাকিদের তুলনায় তার স্ট্রাইকরেট, বোলিং এভারেজ ও ইকোনমি রেট কম। তাছাড়া ১৩ ম্যাচে ১৬ খানা উইকেটও তিনি বাগিয়েছেন।