শচীন ও ঊনপঞ্চাশের প্রথম

টেস্ট ক্রিকেটে ততদিনে করা হয়ে গেছে সাতটি সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলে ফেলেছেন ৭৭ টি ম্যাচ।

টেস্ট ক্রিকেটে ততদিনে করা হয়ে গেছে সাতটি সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলে ফেলেছেন ৭৭ টি ম্যাচ। কিন্তু অধিকাংশই লোয়ার অর্ডারে। তখনও প্রথম পনেরো ওভারের সুবিধে নেবার জন্যে আক্রমণাত্মক ব্যটারকে প্রথমে নামানোর চল ছিল না। বরং তিনি শেষ দশ ওভারে নেমে স্লগিং করে ৪০-৫০ রান দ্রুত তুলে দিয়ে দলের রান ২৫০ পার করিয়ে দিয়ে একটা সুবিধেজনক অবস্থানে দলকে পৌঁছে দেবেন, এটাই প্রচলিত ছিল।

স্বাভাবিকভাবেই, সেঞ্চুরি করার সুযোগ থাকতো না, তবে এর মধ্যেই করে ফেলেছিলেন ১৬ টি হাফ সেঞ্চুরি, সাথে সাতটি ম্যান অফ দা ম্যাচ পুরস্কার। ফলে, যারা ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি করতে ৭৮ ম্যাচ লেগে যাবার কারণে শুরুর দিকে শচীন নির্বাচকদের সস্নেহ প্রশ্রয় পেয়েছেন বলে মনে করেন, তাদের হয়তো নিজেদের ধারণা পুনর্বিবেচনা করতে হতেও পারে। এই ম্যান অফ দা ম্যাচের মধ্যে ৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচটিও আছে।

৯২ বিশ্বকাপে মার্ক গ্রেটব্যাচকে পিঞ্চ হিটিং রোলে ওপেন করিয়ে সফল হলেও, ভারত ৯৪ সাল অবধি নভজ্যোৎ সিং সিধু আর মনোজ প্রভাকরকে দিয়ে সাবেকী ধরণের ধীরস্থির ওপেনিং পার্টনারশিপ করাতেই আগ্রহী ছিল। শচীন টেন্ডুলকার ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলেন যে টেস্ট ম্যাচে ৫ নম্বরে নেমে তাঁর যে অবদান তিনি রাখতে পারছেন, ওয়ানডে ম্যাচে শেষ ১০-১৫ ওভার খেলে তাঁর সিকিভাগও দলের জন্যে রাখতে পারছেন না।

তিনি অধিনায়ক ও কোচকে নিজের ইচ্ছের কথা জানালেন। কিন্তু ওপেন করতে নেমে শুরুতেই যদি শচীন আউট হয়ে যান তাহলে কি হবে – কে পরের দিকে একটা ভালো ফিনিশ করবেন সেই চিন্তা টিম ম্যানেজমেন্টকে দ্বিধায় রেখেছিল। যা পরবর্তীকালেও ১৯৯৯ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে ভোগাবে।

অবশেষে ৯৪ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম ওয়াডে ম্যাচের দিন সকালে সিধু আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া ঘাড় নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন। শচীন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। কোচকে গিয়ে বললেন যে একবার সুযোগ দিতে, ওপেন করে ব্যর্থ হলে আর কোনোদিন বলবেন না। ভাবুন, একজন ক্রিকেটার এত বড় রিস্ক নিচ্ছেন, যে ব্যর্থ হলে তিনি আর কোনোদিন ওপেন করতে চাইবেন না। অবশেষে অধিনায়ক আজহারউদ্দিন ও কোচ ওয়াদেকর শচীনকে ওপেন করানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ১৪২ রান করে মাত্র। অজয় জাদেজার সাথে ওপেন করতে নামেন শচীন , এবং সংক্ষেপে বলতে গেলে, টি টোয়েন্টি যুগের এক দশক আগে আমাদের দেখান টি টোয়েন্টি ব্যাটিং কেমন হবে ভবিষ্যতে। কাট, পুল, ড্রাইভের ফুলঝুরিতে ৪৯ বলে ৮২ রান করে যখন আউট হন, দলের রান ১১৭/২! ( যার মধ্যে একাই তিনি সিংহভাগ রান করেছেন)!

এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ওপেন করা শুরু করার পরে দশম ওয়ান ডে ম্যাচে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেন, আজকের দিনে, ১৯৯৪ সালে। ১১০(১৩০) ইনিংসটি তাঁকে ম্যান অফ দা ম্যাচের পুরস্কার এনে দেয়। কিন্তু আমরা অনেকেই ভুলে গেছি ওপেনিং শুরু করার পর, প্রথম দশটি ম্যাচে শচীনের স্কোর ছিল যথাক্রমে – ৮২(৪৯), ৬৩(৭৫), ৪০(২৬) – নিউজিল্যান্ড সফরে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

এরপরে – ৬৩(৭৭) বনাম আমিরশাহী, ৭৩(৬৪) বনাম পাকিস্তান, ৬(৭) বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২৪(২৬) বনাম পাকিস্তান ( আগের চারটি ম্যাচ শারজায়), ১১*(১৬) বনাম শ্রীলঙ্কা, ৬(৫) বনাম শ্রীলঙ্কা এবং তারপরে ১১০(১৩০) বনাম অস্ট্রেলিয়া। এরপরে সেঞ্চুরি আসতে থাকে একের পর এক। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর ৪৯ টি ওয়ান ডে সেঞ্চুরির প্রথমটি হয়েছিল আজকে, ঊনত্রিশ বছর আগে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...