অলক কাপালির হ্যাটট্রিক – দিনটি ছিল ২০০৩ সালের ২৯ আগস্ট। প্রায় প্রস্তর আগের ঘটনা। তবে, হ্যাটট্রিক করা বোলারদের মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কম উইকেট ও সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় অলকের।
১৭ টেস্টে অলকের উইকেট মাত্র ছয়টি। হ্যাটট্রিকের উইকেটগুলো তার ক্যারিয়ারের শেষ ৩ উইকেট। এরপর আরও ৬ টেস্ট খেলে উইকেট পাননি।
ক্যারিয়ার বোলিং গড় ১১৮.১৬। হ্যাটট্রিক করা বোলারদের মধ্যে পঞ্চাশের বেশি বোলিং গড় আর কেবল পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামির (৫২.৭৪)।
অলকের কৃতিত্বকে খাটো করছি না অবশ্যই। বরং কৃতিত্বটাই বোঝাচ্ছি। তিনি তো ব্যাটিং অলরাউন্ডার। অলকই টেস্ট ইতিহাসের একমাত্র বোলার, যিনি মূলত বোলার না হয়েও হ্যাটট্রিক করেছেন এবং তার মতো স্রেফ ২.১ ওভার বোলিং করেই হ্যাটট্রিক নেই আর কারও। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।
লাইভ দেখেছিলাম টেন স্পোর্টসে। প্রথম উইকেটে ডেলিভারিটি ছিল গুগলির মতো। ফ্লাইটেড বল, পিচ করে হালকা ভেতরে ঢোকার মুখে শাব্বির আহমেদ পা বাড়িয়ে লফটেড শট খেলেন। মিড অফে হালকা লাফিয়ে ক্যাচ নেন মাশরাফি।
পরের বলটি পিচ করে সোজা যায়। দানিশ কানেরিয়া পা বাড়িয়ে ছেড়ে দেন, বল লাগে পেছনের পায়ে। এলবিডব্লিউর আবেদরে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার রাসেল টিফিন। বলটি অবশ্য অফ স্টাম্প মিস করত প্রায় নিশ্চিতভাবেই।
হ্যাটট্রিক পূর্ণ হয় তাঁর পরের ওভারের প্রথম বলে। এবার উমর গুল ডিফেন্স করতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ছেড়ে দেন বল। যদিও লাইন মিস করেছিলেন আগেই। এই এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় ছিল না।
যেভাবেই হোক, একটা রেকর্ড, একটা ইতিহাস, দেশের ইতিহাসে প্রথম, যেকোনো ফরম্যাটে – এই অর্জন আর গৌরব অলকের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার জন্যও সেই দিনটাকেই বেছে নিলেন তিনি।
আমাদের জন্য নস্টালজিয়াও। ওই সময় ছোট ছোট সাফল্যই সমর্থক হিসেবে আমাদের বড় উচ্ছ্বাসে ভাসাত। টেস্ট হ্যাটট্রিক তো সেখানে বিরাট ব্যাপার – সেটিও পাকিস্তানের বিপক্ষে, পাকিস্তানের মাটিতে – বাড়তি তৃপ্তি তাই ছিল।
ক্যারিয়ারে এত কম উইকেট নিয়েও হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়াদের মধ্যে আরও দুজনের কথা মনে পড়ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জেফ গ্রিফিন একজন। ১৯৬০ সালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই ফাস্ট বোলার। এখনও পর্যন্ত লর্ডসে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার।
সেটি ছিল মাত্র তার দ্বিতীয় টেস্ট। ওই টেস্টেই চাকিংয়ের জন্য অভিযুক্ত হন তিনি। আসলে ছেলেবেলায় একটি দুর্ঘটনায় তার হাতের কাঠামোই বদলে যায়। ওই টেস্টে আম্পায়ার চাকিংয়ের জন্য ‘নো’ ডাকার পর আর কোনো টেস্ট খেলারই সুযোগ পাননি। ২ টেস্টে ৮ উইকেটে ক্যারিয়ার শেষ।
আরেকজন জিমি ম্যাথুস। ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৬ উইকেট অস্ট্রেলিয়ান এই লেগ স্পিনারের। এর মধ্যেই ছিল দুটি হ্যাটট্রিক।
শেষ নয় এখানেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ওই দুটি হ্যাটট্রিক একই টেস্টে এবং একই দিনে। এখনও পর্যন্ত একই টেস্টের দুই ইনিংসে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার তিনি। ১৯১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন।
মজার ব্যাপার হলো, ওই ম্যাচে তার উইকেট ছিল ওই তিনটি করেই। দুইবার তাঁর হ্যাটট্রিক বলের শিকার টমি ওয়ার্ড। যাকে বলে কাক-তালের চূড়ান্ত।
– ফেসবুক থেকে