বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের কথার লড়াই চলছে। আরেক দফা বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি আসল পাকিস্তানের তরফ থেকে।
পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী এহসান মাজারি জানিয়েছে, বিসিসিআই এশিয়া কাপের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে অনড় থাকলে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে ভারত যাবে না পাকিস্তান ক্রিকেট দল।
আগামী অক্টোবরে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। আগামী আসরে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পিসিবি।
পিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে অংশগ্রহনের জন্য আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র চেয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন পাকিস্তানে ক্রীড়ামন্ত্রী মাজারি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ভারত যদি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এশিয়া কাপ খেলার জন্য অনড় থাকে, তাহলে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিয়ে একই দাবি করবো আমরা।’
রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তানের মাটিতে এশিয়া কাপ খেলতে রাজি নয়। তবে পাকিস্তানের দেয়া হাইব্রিড মডেলে ভারতের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করার একদিন পর এমন কথা বললেন মাজারি।
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সদস্য হিসাবে ১১ জন মন্ত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে আমি একজন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে সুপারিশ করবো। প্রধানমন্ত্রী পিসিবির প্রধান উপদেষ্টা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি।’
আগামী ৯ থেকে ১৬ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বৈঠক রয়েছে। সেখানে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহের সঙ্গে কথা বলতে পারেন পিসিবির নতুন চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ। ঐ বৈঠকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখনও এশিয়া কাপের সূচী চূড়ান্ত হয়নি। পিসিবির দেয়া হাইব্রিড মডেলেই টুর্নামেন্টটি যৌথভাবে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে আয়োজনের সিদ্বান্ত হয়েছে। তবে এই ‘হাইব্রিড মডেলের’ পক্ষে নন মাজারি।
মাজারি বলেন, ‘এশিয়া কাপের আয়োজক পাকিস্তান। সব ম্যাচ আয়োজনের অধিকার আছে পাকিস্তানের। ক্রিকেটপ্রেমীরাও তেমনটা চায়। আমি হাইব্রিড মডেল চাই না।’
ক্রিকেটের মধ্যে ভারতই রাজনীতি টেনে এনেছে দাবি করে মাজারি বলেন, ‘ক্রিকেটের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এসেছে ভারত। আমি বুঝতে পারছি না ভারত সরকার কেন তাদের ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে খেলতে পাঠাতে রাজি নয়। কিছু দিন আগেই ভারতের বেসবল দল ইসলামাবাদে খেলে গিয়েছে। ব্রিজ খেলতেও পাকিস্তানে এসেছিল ভারতের খেলোয়াড়রা। সেখানে ৬০ জনের বেশি মানুষ ছিল। ঐ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে আমি গিয়েছিলাম। তারা সেখানে জিতেছে। পাকিস্তানের হকি, ফুটবল, দাবা দল ভারতে গিয়ে খেলেছে।’
নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড দলের পাকিস্তান সফরের উদাহরণ টেনে এনে মাজারি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের যুক্তি ঠিক নয়। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দল পাকিস্তান সফর করেছে। রাষ্ট্রপতির সমান নিরাপত্তা পেয়েছে তারা। আগে যখন ভারত দল এখানে এসেছে তখনও ক্রিকেটপ্রেমীরা তাদের স্বাগত জানিয়েছে। নিরাপত্তা হলো অজুহাত। আমরা পাকিস্তান সুপার লিগও (পিএসএল) আয়োজন করেছি, সেখানে অনেক বিদেশি খেলোয়ড় ছিল।’
পুনরায় দু’দেশের ক্রিকেট সফরের শুরুর পক্ষে মাজারি। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ সবচেয়ে বেশি দেখে মানুষ। আমরা চাই সুস্থ ক্রিকেট খেলা হোক। আমরা ভারতের কাছে ইতিবাচক সাড়া আশা করছি।’