আরেকটি বুলেট

মাত্র ১৪ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ার। ঝুলিতে উইকেট সংখ্যাও খুব বেশি নেই। তাঁর পরিসংখ্যানের পাতায় চোখ বুলালে খুব সাদামাটা একজন পেসারই মনে হবে। তবে এবাদত হোসেন এই সাদামাটা টেস্ট ক্যারিয়ারটাকে রঙিন করে ফেলেছেন। সেদিন বাংলাদেশের মানুষ ঘুম থেকেই উঠেই প্রায় অবিশ্বাস্য এক আনন্দের স্বাদ পেয়েছিল। যার নায়ক ছিলেন এই এবাদত হোসেন।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই টেস্টের পর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছেন এবাদত হোসেন। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ইনজুরির কারণে অনিশ্চিত তাসকিন আহমেদ ও শরিফুলের খেলাও। ওদিকে ডিপিএলে ফিল্ডিং এর সময় হাতে চোট পেয়ে সেই দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে তুললেন এবাদত। যদিও বিসিবি থেকে জানানো হয়েছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন এবাদত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশেরও এক্সযে এবাদতকে ভীষণ প্রয়োজন।

ওদিকে এবাদত হোসেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক ধৈর্য্যের এক ফল। টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরেই তিনি দলের সাথে আছেন। বেশকিছু ম্যাচও খেলেছেন। তবে নিউজিল্যান্ডে সেই টেস্টের আগে আসলে তাঁর ক্যারিয়ারে বলার মত কিছুই ছিল না। অনেক সময় একাদশে থাকলেও বল হাতে তেমন একটা সুযোগ আসতো না।

বাংলাদেশের উইকেট গুলো এবাদতদের জন্য একটা অভিশাপের মত হয়ে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল তাঁদের আগমন শুধু হারিয়ে যাওয়ার জন্যই। তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে গিয়ে এবাদত প্রমাণ করলেন লাল বলটা নিয়ে তিনিও খেল দেখাতে পারেন। যেই কন্ডিশনে এর আগে বাংলাদেশ কখনো চোখে চোখ রেখে লড়াইটাই করতে পারেনি। সেখানে গিয়েই নিজেকে চেনানোর চ্যালেঞ্জটা নিলেন সিলেটের এই পেসার।

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপকে রীতিমত একাই গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজের পরিচয়টা জানান দিলেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক সেই টেস্ট জয়ের নায়ক হয়ে রইলেন এবাদত হোসেন। লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সেনানী তিনি।

অথচ মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিন পর্যন্তও তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে নির্লিপ্ত চরিত্র। তবে বাংলাদেশে ঠিক করে সূর্য রোদ দেবার আগেই বদলে গেল প্রেক্ষাপট। টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠলেন সিলেটের এবাদত হোসেন, যার কাধে চড়েই বাংলাদেশ দেখা পেল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের।

সেই একটি টেস্ট, একটি ইনিংস বদলে দিল এবাদতের জীবন গল্প। বদলে গেল বাংলাদেশের পেস আক্রমণের চিত্রও। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে এসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও একেবারে খারাপ করেননি। পুরষ্কার হিসেবে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলেও ডাক পেয়েছিলেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়েও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এবাদত।

প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। যদিও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারতে হয়েছিল। তবে এবাদত যে হারিয়ে যেতে আসেননি তাঁর প্রমান মিলেছে। এবাদতের স্যালুটই এখন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের ছবি হয়ে উঠেছে।

নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মত কঠিন কন্ডিশনে গিয়ে যে বাংলাদেশ লড়াই করতে পারে তা প্রথম তো তিনিই করে দেখিয়েছেন। ফলে দেশের ক্রিকেটে একটা নতুন শুরুরও পথ দেখিয়েছেন সিলেটের এই পেসার। তাঁর সাথে সাথে টেস্ট ক্রিকেটে উঠে আসছে খালেদের মত পেসাররাও।

এখন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলছেন। শেখ জামালদের হয়ে প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই পেয়েছেন তিন  উইকেট। ধীরে ধীরে সাদা বলের ক্রিকেটেও নিজেকে শাণিত করছেন। হয়তো একদিন ওয়ানডে ফরম্যাটেও বাংলাদেশকে দুহাত ভরে দিবেন। তাসকিন, শরিফুলদের সাথে পেস আক্রমণে এবাদতের সংযোজন হলে তো আসলে দেশের ক্রিকেটেরই লাভ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link