ব্রায়ান লারাকে ‘আইডল’ মেনে দুরন্ত শৈশব কাটিয়েছেন। এরপর লারার পদাঙ্ক মেনেই পা বাড়িয়েছিলেন বাইশ গজের ক্রিকেটে। সে যাত্রায় বিকেএসপিতে ভর্তি। কৈশোরে সেখানে বেড়ে ওঠা। ক্রিকেটের দীক্ষাটাও হয়েছে সেখানে। বলছি, মুশফিকুর রহিমের কথা। দেশের উঠতি ক্রিকেটাররা যারা দেশের ক্রিকেট আকাশ রক্ষায় এগিয়ে যেতে চায়, তাদের জন্য অনুকরণীয় এক চরিত্র হচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। পরিশ্রম, তপস্যা, সাধনাই যার অভিধানে প্রধান শব্দ।
নিজেকে শৃঙ্খলার শিকলে বেঁধে, ‘পরিশ্রমের বিকল্প নেই’— এই আপ্তবাণীকে মেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিক কাটিয়ে দিয়েছেন ১৮ টা বছর। এবারের ভারত বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তাঁর ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যে দু’জন এই কীর্তিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে মুশফিক অন্যতম। মুশফিককে অবশ্য আরেকটি কীর্তিতে আলাদা করা যায়। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটার যিনি পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার কীর্তি গড়তে যাচ্ছেন।
ঐতিহাসিক লর্ডসে গোড়াপত্তন। এরপর লারার দেশে বিশ্বমঞ্চে অভিষেক। আর সেই অভিষেকটাই হলো দুর্দান্ত। ২০০৭ বিশ্বকাপে যেবার গ্রুপপর্বের ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে শুভসূচনা করলো বাংলাদেশ, সেবার উইনিং রানটা এসেছিল এই মুশফিকের সৌজন্যেই। অবশ্য পোর্ট অব স্পেনে হওয়া সে ম্যাচে মুশফিক শুধু ঐ উইনিং রানটাই করেননি, হাঁকিয়েছিলেন একটি ফিফটিও। বলাই বাহুল্য, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি উইকেটরক্ষক ব্যাটারের কাছ থেকে অর্ধশতকের স্বাক্ষী হয় টাইগাররা।
মুশফিকুর রহিমের বয়স এখন ৩৬ পেরিয়ে ৩৭-এ পড়েছে। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে রয়েছেন গোধূলিলগ্নে। তবে যে বয়সটাতে সিংহভাগ ক্রিকেটারদের ফর্ম থাকে পড়তির দিকে, মুশফিক সেখানে এখনো থাকেন শীর্ষে ওঠার দৌড়ে।
চলতি বছরে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। এখন পর্যন্ত ১৫ ইনিংসে ৪৫.৭৭ গড়ে রান করেছেন ৫৯৫। যেখানে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ৯০.৮৪।
বিশ্বকাপের মঞ্চেও অবশ্য মুশফিক বেশ সফল। এখন পর্যন্ত ৪ বিশ্বকাপ মিলিয়ে ২৮ ম্যাচে ৮৭৭ রান করেছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। যা বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১১৪৬ রান নিয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করার দিক দিয়ে শীর্ষে আছেন সাকিব আল হাসান।
বিশ্বকাপে মুশফিকের ৬ হাফসেঞ্চুরির বিপরীতে ১ টি সেঞ্চুরিও রয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে সেঞ্চুরিটি করেছিলেন মুশফিক। যদিও সে ম্যাচটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সেবারের বিশ্বকাপে সাকিবের পর মুশফিকের ব্যাট থেকেই এসেছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এখন পর্যন্ত ৪ বিশ্বকাপের মধ্যে ঐ আসরটিই ছিল মুশফিকের ক্যারিয়ার সেরা। ইংল্যান্ডে হওয়া ঐ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩৬৭ রান।
মুশফিকের বিশ্বকাপ ফর্ম কিংবা সাম্প্রতিক ফর্ম- দুটোই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে দারুণ স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তবে ব্যাটিং লাইনআপে তাঁকে এবার সিংহভাগ ম্যাচে ছয় নম্বরেই দেখা যাবে। চলতি বছরে এই পজিশনেই বেশ সফল এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বছরের শেষ প্রান্তে এসে তাই বিশ্বকাপ মঞ্চেও সেটির ধারা নিশ্চয়ই অব্যাহত রাখতে চাইবেন মুশফিক।
ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে যেখানে শুরু হয়েছিল, তাঁর শেষটা হবে এই ২০২৩ বিশ্বকাপে। সেবার ভারতের বিপক্ষে উইনিং শট খেলে নিজেকে রাঙিয়েছিলেন মুশফিক। এবার শেষটা রাঙানোর পালা। মুশফিক ও বাংলাদেশের স্বপ্ন ঐ এক বিন্দুতে মিলে যাবে নিশ্চিতভাবেই। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা কে-ইবা একটু ‘স্পেশাল’ আঙ্গিকে মোড়াতে না চায়।