হামজা না সাকিব, কে সবচেয়ে বড় তারকা!

‘সাকিব আল হাসান অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।’ বছর পাঁচেক আগে বলেছিলেন হামজা চৌধুরী। হুট করেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটা ব্যাটেল শুরু হয়ে গেছে- কে সবচেয়ে বড় তারকা, হামজা নাকি সাকিব?

‘সাকিব আল হাসান অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।’ বছর পাঁচেক আগে বলেছিলেন হামজা চৌধুরী। হুট করেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটা ব্যাটেল শুরু হয়ে গেছে- কে সবচেয়ে বড় তারকা, হামজা নাকি সাকিব?

কে সবচেয়ে বড় তারকা সে প্রসঙ্গ অন্তত এখন খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই লড়াইটাই যে অবান্তর, এই তুলনাই অযৌক্তিক। বাংলাদেশ ফুটবলের জন্যে বেশ বড় একটা ম্যাচই অপেক্ষা করছে। ভারতের মাটিতে হামজা চৌধুরী এসে গায়ে চাপাবেন লাল-সবুজের জার্সি। ম্যাচটার উত্তাপ ঠিক কতটুকু তা আন্দাজ করতে পারছেন?

ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী অবসর ভেঙে ফিরেছেন স্রেফ এই ম্যাচকে সামনে রেখে। ভারত-বাংলাদেশ জুড়েই চর্চা হচ্ছে ম্যাচটিকে ঘিরে। শেষ কবে ফুটবল নিয়ে এই তল্লাটে এত সোরগোল ছিল? সেই সোরগোলকেই সম্ভবত উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেন কেউ কেউ। কিন্তু হামজাকে সাকিবের সাথে তুলনায় ফেলাটা কি খুব জরুরি ছিল?

প্রথমত আপনি, আমি, আমরা কেউ তো অস্বীকার করতে পারব না যে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশাল বড় তারকা। তার ভক্তদের সংখ্যাও নিদেনপক্ষে কোটিখানেক। এত বড় পরিমাণ ভক্তদের ফুটবলের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে হামজার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কি আদতে ছিল?

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তার নিরিখে ফুটবল এগিয়ে, স্বাভাবিকভাবেই তারকাখ্যাতিতে এগিয়ে ফুটবলাররা। কিন্তু দিনশেষে তো আপনি এই বাংলার আপামর জনতার তারকা। আপনাকে ভালবাসবে তো এই ১৫-২০ কোটি মানুষ।

হ্যাঁ, ক্রিকেট কোনো গ্লোবাল স্পোর্টসই নয়। ১৫-২০ টা দেশ নিয়মিত খেলে। ক্রিকেট কখনও ফুটবল হতে পারবে না। হামজা বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলাটার সবচেয়ে অভিজাত লিগের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। সেই চ্যাম্পিয়ন দলের আর্মব্যান্ডও পড়েছেন। বৈশ্বিক বিবেচনায় হামজা একটা বৃত্ত হলে সাকিব সেখানে একটা বিন্দু। এখন বৃত্ত যদি সেই পরিমান প্রভাব বাংলাদেশ ফুটবলে রাখতে পারেন, তবেই বোঝা যাবে তিনি সত্যিকারের উদ্ধারকারী জাহাজ।

আমরা সবাই প্রত্যাশা করছি ভারতের বিপক্ষে হামজা দেখাবেন নিজের ঝলক। বাজিমাত করবে বাংলাদেশ ফুটবল দল। একটা দারুণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু ধরুণ তেমনটি ঘটল না, তর্কের খাতিরে ধরেই নিন হামজা কিচ্ছুটি করতে পারলেন না। তাতে করে কি হবে?

এই উন্মাদনা তখন দ্বিগুণ সমালোচনার ঢেউয়ে রুপান্তরিত হবে। কটুক্তি করতে তো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের কোন দ্বিধা নেই। তারা সবাই মিলে কথার বাণ ছুড়ে মারবে হামজার দিকে। বাংলাদেশের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুতেই তো মানসিকভাবে হোঁচট খেতে পারেন হামজা। প্রায় এক কোটি সমর্থক তো নিশ্চয়ই বিপরীতে অবস্থান করছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো সীমা লঙ্ঘন করবে।

তাইতো এমন অবান্তর তূলনার কোন যৌক্তিকতা থাকে না। ফুটবলের সুদিন গত হয়েছে, হয়ত আবার ফিরবে। কিন্তু সেই সুদিনের পথে তো এগোতে হবে সবাইকে সাথে নিয়ে। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিপরীতে দাঁড় করিয়ে নিশ্চয়ই সামনের দিকে এগোনো যায় না। সেদিক থেকে, আমার, আপনার, আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে- দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এভাবে মুখোমুখি দাঁড় না করানোই শ্রেয়।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link