অনিল দলপত, সাদামাটা নাটকীয়তা

হুট করেই এক শূন্যস্থান। পাকিস্তান ক্রিকেট তখন হন্যে হয়ে সন্ধান কাজ অব্যাহত রেখেছে। কিংবদন্তি উইকেট রক্ষক ওয়াসিম বারি ক্রিকেটকে জানিয়েছেন বিদায়। তাঁর অবর্তমানে উইকেটের পেছনে কাউকে না কাউকে তো সামলাতে হবে দায়িত্ব।

হুট করেই এক শূন্যস্থান। পাকিস্তান ক্রিকেট তখন হন্যে হয়ে সন্ধান কাজ অব্যাহত রেখেছে। কিংবদন্তি উইকেট রক্ষক ওয়াসিম বারি ক্রিকেটকে জানিয়েছেন বিদায়। তাঁর অবর্তমানে উইকেটের পেছনে কাউকে না কাউকে তো সামলাতে হবে দায়িত্ব। গোটা পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়াসিম বারির সমমানের কাউকে যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বহুল প্রতীক্ষার পর খরা কাটানো বৃষ্টি হয়ে হাজির অনিল দলপত।

অনিল দলপত, পাকিস্তান ক্রিকেটে খুব সুপরিচিত এক নাম নয়। অধিকাংশ ক্রিকেট সমর্থক হয়ত ঠাওর করতে পারবেন না যে ঠিক কবে নাগাদ খেলেছিলেন তিনি পাকিস্তান জাতীয় দলে। ঠিক এতটাই স্বল্প এবং অনুজ্বল এক ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন। ক্যারিয়ার জুড়ে বলার মত তেমন কিছুই নেই তাঁর।

১৯৬৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে জন্মেছিলেন অনিল দলপত। ক্রিকেট খেলাটা তিনি বেশ অল্প বয়স থেকেই শুরু করেছিলেন। কারণ তাঁর বাবা দলপত সোনারিয়া ছিলেন একজন ক্রিকেট পাগল সংগঠক। তিনি স্থানীয় এক ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। মূলত তাঁর উৎসাহেই ক্রিকেট খেলাটা শুরু করেছেন অনিল দলপত।

পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি লম্বা সময় ধরেই খেলে গেছেন। তবে পাকিস্তান জাতীয় দলের নজরে আসেন এক মৌসুমে ৬৭ খানা ডিসমিসালে অংশ নিয়ে। তখনই আবার পাকিস্তান দলের উইকেট রক্ষকের সংকট দেখা দেয়। নাটকীয়ভাবে দলের সাথে যুক্ত হয়ে যান অনিল। তবে ঠিক যতটা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে তিনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন, তার চাইতেও দ্বিগুণ সাদামাটা ছিল তাঁর জাতীয় দল ক্যারিয়ার।

করাচির ছেলে ছিলেন অনিল দলপত। স্বপ্নের মত করে করাচির মাঠেই অভিষেক হয় তাঁর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে সাথে সম্পৃক্ত হতে শুরু করেন। ১৯৮৪ সালের দুই মার্চ তাঁর মাথায় উঠেছিল পাকিস্তানের টেস্ট ক্যাপ। এরপর কেবল নয়টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন অনিল দলপত। এই ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত করবার মত কোন রসদই যেন ছিল না তাঁর কাছে।

এই নয় টেস্টে ১২ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র ১৬৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। তবে অধিকাংশ সময়ে তিনি ব্যাট করতে নেমেছেন একেবারে শেষে দিকে। মূলত লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে, লোয়ার অর্ডারের মাঝেই ঘুরপাক করেছেন অনিল। ২৫টি ডিসমিসালে অংশ নিয়েছিলেন ডান-হাতি এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। ওয়ানডে দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন অনিল দলপত। সেখানের পরিসংখ্যান আরও বেশি দৃষ্টিকটু।

১৫ ম্যাচের দশ ইনিংসে ব্যাট করে সর্বসাকুল্যে রান জমা করেছেন ৮৭। উইকেটের পেছনে কেবল ১৫ বার অবদান রেখেছেন প্রতিপক্ষকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখাতে। পাকিস্তান সর্বদাই ক্রিকেট বিশ্বে সেরা হবার জন্য লড়াই করেছে। তাদের দলে এমন সাদামাটা একজন খেলোয়াড় টিকে যাওয়া নিতান্ত অকল্পনীয়। সেটাই হয়েছে। তিনি টিকতে পারেননি। বছর খানেকের মাথায় তিনি ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে।

এরপর তিনি আর নিজেকে কখনোই ফিরিয়ে আনতে পারেননি জাতীয় দলের আশেপাশে। মাঠের খেলায় খুব একটা প্রভাব তিনি বিস্তার করতে পারেননি। তবে একটা রেকর্ড অনিল দলপত গড়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রথম পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খেলেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে। এই এক রেকর্ডে নিয়েই অনিল দলপত হয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসের অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link