ফাইনাল মানেই বাতাসে শিরোপার ঘ্রাণ, শিরা-উপশিরায় আরাধ্য লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে যাওয়ার রোমাঞ্চ। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার আগের মুহূর্ত সবচেয়ে কঠিন, ঠিক তেমনি ফাইনালের লড়াইয়ে পারফরম করাটাও যেনতেন কাজ নয়। সামর্থ্যের পাশাপাশি তীব্র মানসিক দৃঢ়তা থাকলেই কেবল গোধূলি লগ্নের লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়।
আর এই দুইটি গুণেই বোধহয় পরিপূর্ণ আকবর আলী। সেজন্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শেষ ধাপটা কি অনায়াসে পেরিয়ে যান তিনি; এই যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ফাইনালে পরাজয় যখন হাতছানি দিয়ে ডাক ছিলো তাঁকে, তখনি প্রতিরোধ গড়েছেন – বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। অবশ্য ‘পচেসট্রুম রূপকথা’-র জন্ম দেয়া এই ব্যাটারের কাছে এমনটা প্রত্যাশিত বটে।
একদিকে মুমিনুল হক, নাসুম আহমেদ, মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত দীপু, নাইম হাসানদের নিয়ে গড়া ইস্ট জোন; অন্যদিকে প্রীতম হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান সোহানদের নর্থ জোন। স্বাভাবিকভাবেই ফাইনালে মুমিনুল বাহিনী ফেভারিট হিসেবে নেমেছিল। মাঠের খেলাতেও এগিয়েছিল তাঁরা; নর্থ জোনের জয়ের জন্য যখন ৯৮ রান লাগতো হাতে তখন ছিল মাত্র চার উইকেট।
আর সেই মুহূর্তে মাঠে নামেন অধিনায়ক নিজে; প্রীতমকে সঙ্গে নিয়ে এরপর শুরু করেন জয় যাত্রা। একের পর এক বাঁধা টপকে পৌঁছে যান তীরের কাছাকাছি; জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করা নর্থ জোন হুট করেই তখন ধাক্কা খায়। সেট ব্যাটার প্রীতম কাটা পড়েন রান আউটে। তবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আকবর টলেননি একটুও, জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন।
অভিজ্ঞতার মানদন্ডে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা নর্থ জোন ফাইনালে উঠবে সেটিই তো ভাবেনি তেমন কেউই। অথচ আকবরের নেতৃত্বে তারুণ নির্ভর দলটা ঠিকই সুদূরতম কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল। ফাইনালে জাতীয় দলের তারকা ঠাঁসা ইস্ট জোনও ব্যাট-বলের লড়াইয়ে অনেক দূর ছিটকে ফেলেছিল তাঁদের। কিন্তু সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন তরুণ এই উইকেটকিপার।
যদিও ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের পর এমন চাপ তাঁর কাছে নস্যি। যশস্বী জসওয়াল, রবি বিষ্ণয়দের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছিলেন বিজয়ের আকাশে। তখনি বোঝা গিয়েছিল বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে একজন ক্যাপ্টেন কুলকে। বিসিএল ফাইনালে সেদিনের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আকবর দ্য গ্রেট এবার প্রমাণ করলেন তিনি সঠিক পথই আছেন।