নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলে, সবচেয়ে অভিজ্ঞদেরই সামনে এগিয়ে আসতে হয়। দলের টপ পারফর্মারদেরই নিজেদের সামর্থ্যের আরও একবার প্রমাণ রাখতে হয়। তাদেরই নতুন স্বপ্নের পথে পারি দেওয়াটা দেখিয়ে দিতে হয়। আর এই কাজটা ঠিক কি করে করতে হয়, তা রীতিমত হাতের মুঠোয় বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের। তাঁরা জানেন কি করে দলের স্বপ্নটাকে বয়ে বেড়াতে হয়, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
ধ্বংসস্তুপের ছাই থেকে গ্রীক পুরাণ মতে ফিনিক্স পাখির আবার জন্ম হয়। পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা নিশ্চয়ই তার থেকে কম কিছু নয়। শুরুতেই দুই হারে, টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কা। সেখান থেকে নেদারল্যান্ডসের জ্বালিয়ে দেওয়া প্রদীপের আলোতে পাকিস্তান খুঁজে নিল বিশ্বকাপ ফাইনালের পথ। তবে যতটা সহজ মনে হচ্ছে গল্প। ততটা সহজ নিশ্চয়ই ছিল না।
সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা দল নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে হারিয়ে তবেই যাওয়া যেত স্বপ্নের ফাইনালে। আর সে কাজটা মোটেও সহজ হবার কথা নয়। তবুও পাকিস্তানের বোলাররা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলেন। স্বল্প রানের মধ্যে আটকে রাখা গেল ব্ল্যাকক্যাপসদের। টার্গেটটা ১৫৩। এই ১৫০ এর ঘরের টার্গেটের একটা সুখস্মৃতি রয়েছে। ব্যাট করতে নামার আগে বাবার আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান নিশ্চয়ই সেই সুখস্মৃতির কথাটাই স্মরণ করেছিলেন।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে দেওয়া জুটি তো ছিল বাবর-রিজওয়ান জুটি। সেদিনের টার্গেট ছিল ১৫২। অষ্টম আসরের সেমিফাইনালে কেবল এক রানই বেশি। তাই হয়ত প্যাভিলিয়ন থেকে বাবর ও রিজওয়ান দুইজনই সম্ভবত ঠিক করে এসেছিলেন আজকেও বড় এক জয় নিয়েই চলে যাবেন ফাইনালে।
এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি আশার প্রতিফলন ঘটাতে হয়েছিল ব্যর্থ। রিজওয়ান তবু রান করেছেন কিছু। তবে বাবরের ব্যাটে যেন খরা। রানের হাহাকারে চারিদিক ফেটে চৌচির। তবে সে খরা কাটলো। একেবারে মোক্ষম সময়েই কাটলো। যখন দলের খুব বেশি প্রয়োজন ঠিক সে সময়েই বাবরের ব্যাটে রান। এবার আর পাকিস্তানকে ঠেকায় কে! দুই সতীর্থ পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে পার্টনারশীপের রেকর্ড গড়েছেন অগণিত।
আজকেও গড়লেন ১০৫ রানের পার্টনারশীপ! পাকিস্তানের পক্ষে যা ওপেনিং জুটিতে রানের বিচারে একাদশতম। তাঁরা হয়ত চেয়েছিলেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানো ম্যাচের মত করেই পারফর্ম করতে। তবে সেটা আর হতে দেননি ট্রেন্ট বোল্ট। তিনি বাবরকে থামিয়ে দিলেন, ৫৩ রানে। ছয় ইনিংস পর আবারও অর্ধশতক বাবরের ব্যাটে। মাঝের সময়টায় রান তো এক অংক ছাড়াতে পারেনি অধিকাংশ সময়ে। চারিদিকে নিন্দার ছড়াছড়ি। বাবরের ব্যাটিং পজিশনের পরিবর্তন নিয়ে আসার পরামর্শ।
এত সব কিছু উপেক্ষা করে বাবর আবারও প্রমাণ করলেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’। অন্যদিকে বাবরের প্রস্থানের পর রিজওয়ানও তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম অর্ধশতক। তবে তিনিও ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারেননি। আউট হন ৫৭ রানে। কিন্তু ততক্ষণে কাজের কাজটা হয়ে গিয়েছে। বাবর আর রিজওয়ান জুটি পাকিস্তানের ফাইনালে যাবার পথটা মসৃণ করে দিয়ে গিয়েছে। দলীয় ১৩২ রানে যখন রিজওয়ান আউট হন, তখন পাকিস্তানের জয়টা কেবল সময়ের ব্যবধান।
তবুও শেষ ওভার অবধি গড়িয়েছে ম্যাচ। বাবর-রিজওয়ানের স্বস্তি-জনক পার্টনারশীপ পাকিস্তানকে ১৩ বছর বাদের ফাইনাল খেলবার সুযোগ করে দেয়। ছয়টা সেমিফাইনাল খেলার পর অবশেষে আরও একবার ফাইনাল খেলার সুযোগ।
বাবরও ফিরেছেন ফর্মে। দলটাও রয়েছে দারুণ ছন্দে। অন্যদিকে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। পাকিস্তান যদি নিজের দ্বিতীয় শিরোপা উদযাপন করে মেলবর্নে, তাহলে বোধহয় অবাক হবার কিছু থাকবে না। কেননা ‘আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান’ যেকোন কিছু করে ফেলতে পারে।