শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা কীর্তি

কি অবলীলায় লিটন দাস কাব্য লেখেন বাইশ গজে! ব্যাটের দারুণ ছোঁয়ায় শক্ত মাটির উপর দাড়িয়েও মনোমুগ্ধকর সব চিত্রকর্ম এঁকে ফেলেন। তিনি যেন সবুজ মাঠের শিল্পী। তাঁর প্রতিটা ইনিংসই চোখ ধাঁধানো। আর রেকর্ডের বইয়েও তিনি বিচরণ করছেন নিয়ম করে। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে এখন তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম। এখানেই তো শেষ নয়।

একটা সময় লিটন দাসকে ঘিরে ঘুরে বেড়াতো নানান  ধরণের সমালোচনা। তাঁর প্রতিভা নিয়ে ছিল না তেমন কোন সন্দেহ। তবুও তিনি নিজের সেই শিল্পী সত্ত্বার পূর্ণ ব্যবহারটা করতে পারছিলেন না। দৃষ্টিনন্দন শুরু গুলোর শেষটা হতো অতিদ্রুত। তাইতো আফসোসে ঘরবাড়ি হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মনে।

সেই দিন গত হয়েছিল ২০২২ সালে। তিনি বলে কয়ে রানের মালা গাঁথা শুরু করেন সেই বছরই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিত্রই যেন পাল্টে  যেতে থাকে ক্রমশ। তবে এই বছরের শুরুতে খানিকটা ছন্দ পতন হয়েছিল লিটনের। পূব আকাশে খানিকটা মেঘের ঘনঘটা। শেষ তবে লিটনের দিন। সেই মেঘ ঠেলে আবারও লিটন বেড়িয়ে এলেন নিজের স্বরূপে। বনে গেলেন প্রথম।

বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির মালিক এখন লিটন দাস। সাগরিকার মাটিতে আরও একবার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে ছবি আঁকলেন। ক্রিকেট মাঠের ভিঞ্চি বললে নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি করা হয় না। সৌন্দর্যের সাথে তাণ্ডব চালালেন লিটন কুমার দাস। অসহায় হিউম, অ্যাডায়াররা মাঠের বাইরে যাওয়া বলগুলো শুধু অবলোকন করেছেন রাজ্যের হতাশা নিয়ে।

অদম্য লিটনের জবাব জানা ছিল না কারো। লিটন তুলোধুনো করেছেন আইরিশ বোলারদের। বল হাতে আসা প্রতিটা আইরিশ বোলার রান খরচের পাল্লাটা ভারি করে ফিরে গেছেন। লিটনের ধ্বংসলীলায় তাদের অবশ্য করার কিছুই ছিল না। নিজের দিনে লিটন ঠিক কতটা ভয়ংকর তা আরও একবার দেখে ফেলল বিশ্ব ক্রিকেট।

মাত্র ১৮ বলেই তিনি করে ফেলেছেন অর্ধ-শতক। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে ২০ বলের অর্ধ-শতক করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৭ সালে গড়ে যাওয়া সে রেকর্ডটা এবার ভেঙে ফেলেছেন লিটন। প্রায় ১৬ বছর ধরে অক্ষত থাকা রেকর্ডটা পেয়েছে এখন নতুন মালিক। তবে এদিন অর্ধ-শতক করেই থেমে যাননি লিটন। নিজের ইনিংসটি আরও বড় করতে থাকেন ঝড়ো গতিতে। চট্টগ্রামের ঝড় যেন এদিন পাত্তাই পায়নি লিটন ঝড়ের সামনে।

দুর্বার গতিতে লিটন তাঁর প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন। তবে একটু বেশি দ্রুতই ছুটতে গিয়ে নিজের উইকেটটি বিসর্জন দিয়ে এসেছেন লিটন। ওয়াইড লাইনের বাইরের বল খেলতে গিয়ে আইরিশ উইকেট রক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরিও করতে পারতেন তিনি। তবে তা আর হয়নি।

৮৩ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বিদায় নেন বাংলাদেশের এই নান্দনিক ব্যাটার। মাত্র ৪১ বল খরচায় তিনি রান তুলেছেন ২০২ স্ট্রাইকরেটে। তিনি যখন থেমেছেন তখন বাংলাদেশকে রেখে গেছেন শক্ত অবস্থানে। এদিন রনি তালুকদারকে সঙ্গী করে ১২৪ রানে জুটি গড়েন লিটন। রনি ৪৪ রানে আউট হয়েছেন।

রনির আরও একটি অর্ধ-শতকের আক্ষেপ থেকে গেল নিশ্চয়ই। তবে লিটন হয়ত পুড়ছেন আরও বিস্তৃত কোন আফসোসের আগুনে। কেননা আরও এক রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তেই তো ছিলেন। অবশ্য ৮৩ রানের এই ইনিংসের মধ্য দিয়েই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ৫০টি ছক্কার মালিক এখন তিনি।

এই সব ইনিংসগুলো হয়ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আরও খানিকটা উতলা করে তুলবে। কেননা আইপিএল খেলার ছাড়পত্র তো মেলেনি লিটনের। তাইতো খানিকটা দেরি করেই লিটন যোগ দেবেন নাইট রাইডার্স ডেরায়। অপেক্ষা প্রহর তাদেরও বাড়লো। লিটন এমনই। তিনি তাঁর চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছড়াবেন। আবার তিনিই আক্ষেপ আর হতাশায় ডোবাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link