সাকিব, আপনি মানুষ তো?

একজন সাকিব ঠিক কি করে এত কিছু সামলান তা কারোই হয়ত জানা নেই। খোদ সাকিব এসবের উত্তর দিতে পারবেন হয়ত। এই সাকিবকে আলোচনার বাইরে রাখার কোন উপায়ই নেই।

চায়ের দোকান থেকে স্কুল-কলেজের টিফিন পিরিয়ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের ফাঁকে, অফিসের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে। সর্বত্রই বিচরণ সাকিব আল হাসানের। তিনি যেন ঠিক এমনটাই চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সবার আলোচনার খোড়াক মেটাতে। সে কাজটা সুনিপুণভাবেই যেন করে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। এক মুহূর্ত নিস্তার নেই তাঁর, তিনিও চাননা নিস্তার ঘটুক তাঁকে নিয়ে হওয়া আলোচনার।

সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেট তাঁকে কেন্দ্র করেই ঘোরে। এই কথা বললেও খুব বেশি ভুল বলা হয় না। মাঠের পারফরমেন্সে তিনি সেটারই প্রমাণ করেছেন বারবার। মাঝে মধ্যেই হয়ত বিস্ময় জাগে, তিনি কি তবে সুপার হিউম্যান! কেননা তিনি একাধারে সবকিছু কি অসধারণ দক্ষতায় সামলে নিচ্ছেন।

গুটিগুটি পায়ে কেশহীন চিবুক নিয়ে বাংলার ক্রিকেটে শুরু করেছিলেন পদযাত্রা। এখন তো রীতিমত এই দেশের প্রতিটি জনপদের তাঁর বিচরণ। হুটহাট করেই খবরের শিরোনামে গোটা গোটা অক্ষরে দেখা যায় সাকিবের নাম। হয় বিতর্ক, না হয় অর্জন। তবুও সাকিব থাকবেন সবখানে। এই তো সেদিন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি করে ফেললেন রেকর্ড। তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন।

এরপর তাঁর নেতৃত্বেই ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ। এসবকিছুতে সাকিবের অবদান নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখা হল, টেলিভিশনের প্রশংসা হল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জয়জয়কার। তিনি যেন বাংলাদেশের নায়ক। আবার ঠিক পরের দৃশ্যেই যেন তিনি আবার ভিলেন। কোন এক অপরাধীর নিমন্ত্রণ রক্ষায় তিনি দুবাই পারি দিয়েছিলেন। এই নিয়ে আবারও সোরগোল। পুরনো সব নথি ঘেটে সাকিবের দোষ খোঁজার চেষ্টা।

সেই দুবাইয়ের ঝক্কি কাটিয়ে, সাকিব সোজা সিলেটে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামলেন। দূর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। সমর্থক আর নিন্দুকদের বাহবা কুড়ালেন। তাদেরকে আক্ষেপের অনুভূতিও দিলেন খানিকটা। আটটি রান দূরে ছিলেন নিজের শতক থেকে। আক্ষেপের রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই সাকিব হাজির নতুন আলোচনার বিষয় নিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়েই সাকিবের সমাবর্তনের ছবির ছড়াছড়ি। সমাবর্তনে তাঁর বলা বক্তব্যও ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। সিলেট থেকে উড়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন। নিজের সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন। আবার উড়ে গেছেন সিলেটে। নিশ্চয়ই তিনি খেলবেন আগামীকালের ম্যাচ। তাঁকে ছাড়া তো আবার বাংলাদেশ দলের কম্বিনেশনটা ঠিক জমে না।

একটা মানুষ ঠিক কি করে এতসবকিছু সামাল দেন? এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই মস্তিষ্কে সজোরে আঘাত করে। এখানেই তো শেষ নয়। তিনি কখনো বিজ্ঞাপনের জন্যে শুটিংয়ে যাচ্ছেন, তো আবার কখনো সুদূর লন্ডনে থাকা পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। নিজের ব্যবসা সামলে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যের শো-রুম উদ্বোধনেও যেতে দ্বিধা করছেন না। আবার মাঠের ক্রিকেটে তিনি বিশ্বের বাঘা ক্রিকেটারদের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন।

একজন সাকিব ঠিক কি করে এত কিছু সামলান তা কারোই হয়ত জানা নেই। খোদ সাকিব এসবের উত্তর দিতে পারবেন হয়ত। এই সাকিবকে আলোচনার বাইরে রাখার কোন উপায়ই নেই। একদিন হয়ত সাকিব ক্রিকেটকে বলবেন বিদায়। সেদিন কি থেমে যাবে সাকিবকে নিয়ে হওয়া সকল আলোচনা আর সমালোচনা?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...