যেখানে আগের চার ম্যাচে দেড়শো রান করে হারেনি কোন দল। সেখানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে। কিন্তু আইপিএলে এরকম অনেক ম্যাচই শেষের রোমাঞ্চ নিয়ে নিয়ে হাজির হয়। আজও আন্দ্রে রাসেল এমন কিছুরই আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি তিনি। সাকিব আল হাসানও এদিন ব্যাটে-বলে ব্যর্থ।
বোলার ও ব্যাটসম্যানদের দাপটে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দশম ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ৩৮ রানে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। এই জয়ের ফলে এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে বিরাট কোহলির দল।
লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য; কিন্তু অসম্ভব ছিলো মোটেও। ২০৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যে রকম শুরুর প্রয়োজন ছিলো সে ভাবেই শুরু করেছিলেন শুভমান গিল। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ওপেনার। ৯ বলে ২১ রান করে কাইল জেমিসনের বলে পাডিকালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
গিল ফিরে যাওয়ার পর নিতিশ রানা ও রাহুল ত্রিপাঠি ভালো শুরু করলেও দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। রানা ১১ বলে ১৮ ও ত্রিপাঠি ২০ বলে ২৫ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর চাহালের দ্বিতীয় শিকার হয়ে কার্তিক আউট হয়ে গেলে ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে কলকতা।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে মরগ্যান ও সাকিব আল হাসান ৪০ রান যোগ করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। কলকাতার অধিনায়ক ফিরে যান ২৩ বলে ২৯ রান করে। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য ৮৪ রান প্রয়োজন হলে শেষের সমীকরণ মেলাতে না পেরে ৩৮ রানে হেরে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স।
আন্দ্রে রাসেল ৩১ ও সাকিব আল হাসান করেন ২৬ রান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বোলারদের পক্ষে ৩ টি উইকেট শিকার করেন কাইল জেমিসন। এছাড়া যুবেন্দ্র চাহাল ও হার্শা প্যাটেল ২ টি করে ও ওয়াশিংটন সুন্দর শিকার করেন ১ টি উইকেট।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুর শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বরুন চক্রবর্তীর বলে রাহুল ত্রিপাঠির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ৫ রান করে ফিরে যান বিরাট কোহলি। অধিনায়কের বিদায়ের পর ঐ ওভারেই আউট হয়ে যান রজত পাতিদারও।
৯ রানে ২ উইকেট হারানো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে চেপে ধরেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলাররা। ইনিংসের প্রথম পাঁচ ওভারে মাত্র ২৮ রান সংগ্রহ করে ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সাকিব আল হাসানের উপর ঝড় বয়ে দিয়ে ১৭ রান সংগ্রহ করেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল।
ম্যাক্সওয়েলের সেই ঝড় স্থায়ী হয় অনেকক্ষণ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দেবদূত পাডিকালকে নিয়ে ৮৬ রান যোগ করেন ম্যাক্সওয়েল। ২৮ বলে ২৫ রান করে পাডিকাল ফিরে গেলে চতুর্থ উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন ডি ভিলিয়ার্স ও ম্যাক্সওয়েল। স্কুপ, রিভার্স সুইপ ও সুইচ হিটের পসরা সাজিয়ে ৪৯ বলে ৭৮ রান করে ম্যাক্সওয়েল আউট হয়ে গেলে ভাঙ্গে এই জুটি।
তবে ম্যাক্সওয়েল ফিরে গেলেও ভাটা পড়েনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর রানের গতিতে। ইনিংসের শেষ তিন ওভারে কাইল জেমিসনকে নিয়ে ৫৬ রান যোগ করেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ডি ভিলিয়ার্সের শেষের ঝড়েই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান সংগ্রহ করে ব্যাঙ্গালুরু। ডি ভিলিয়ার্স ৩৪ বলে ৭৬ ও জেমিসন ৪ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলারদের পক্ষে বরুন চক্রবর্তী দুইটি এবং প্রসিধ কৃষ্ণা ও প্যাট কামিন্স একটি করে উইকেট শিকার করেন। সাকিব আল হাসান দুই ওভারে ২৪ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। সাকিবকে আক্রমণে পেয়ে তুলোধুনো করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু: ২০৪/৪ (ওভার: ২০; কোহলি- ৫, পাডিকাল- ২৫, পাতিদার- ১, ম্যাক্সওয়েল- ৭৮, ভিলিয়ার্স- ৭৬, জেমিসন- ১১; চক্রবর্তী- ৪-০-৩৯-২,কৃষ্ণা- ৪-০-৩১-১, কামিন্স- ৪-০-৩৪-১)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৬৬/৮ (ওভার: ২০; রানা- ১৮, গিল- ২১, ত্রিপাঠি- ২৫, মরগ্যান- ২৯, কার্তিক- ২, সাকিব- ২৬, রাসেল- ৩১; জেমিসন- ৩-০-৪১-৩, চাহাল- ৪-৩৪-২, প্যাটেল- ৪-০-১৭-২)
ফলাফল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ৩৮ রানে জয়ী।