গোল করছেন, কিন্তু প্রতি ম্যাচেই অর্ধেকেরও বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে সাইড বেঞ্চে বসে। পোর্তোর বিপক্ষে ১০১ মিনিটে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের জয়সূচক গোলটাও এসেছিল তাঁর পা থেকে। তারপরও শুরুর লাইনআপে জায়গা পাচ্ছেন না তিনি। কোচের ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্ত নাকি অন্য কিছুর বলি হচ্ছেন তিনি?
বলছি আতোয়াঁন গ্রিজম্যানের কথা। ফ্রেঞ্চ এ স্ট্রাইকার এই মৌসুমে ম্যাচ খেলেছেন ৬ টি। কিন্তু প্লেইং টাইম পেয়েছেন মাত্র ১৬৫ মিনিট। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে ৩০ মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি তিনি। কিন্তু এর কারণটা কি? কারণটা হলো- বার্সেলোনা থেকে গ্রিজম্যান অ্যাথলেটিকোতে এসেছিলেন ধারে। লোনের ক্লজে যে শর্ত ছিল সেই বেড়াজালেই মূলত বন্দী হয়েছেন তিনি৷
বার্সা-অ্যাথলেটিকোর সে চুক্তিতে শর্ত ছিল, গ্রিজম্যান যদি এই দুই বছরে ৫০ শতাংশের বেশি ম্যাচ খেলেন, তাহলে অ্যাথলেটিকো স্থায়ীভাবে গ্রিজম্যানকে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে বার্সাকে তাদের ৪০ মিলিয়ন ইউরো দিতে বাধ্য থাকবে। তবে অ্যাথলেটিকো আর গ্রিজম্যানকে স্থায়ী খেলোয়াড় হিসেবে নিতে ইচ্ছুক না। বিশেষত, ৪০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে ৩২ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকারকে নিতে তারা অনাগ্রহী। মূলত এই শর্ত এড়ানোর জন্যই গ্রিজম্যানকে স্টার্টিং লাইনআপে খেলাতে পারছে না অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রিজম্যানকে প্রতিম্যাচে ৬০/৬১ মিনিটেই কেন মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে? হাফটাইমের পর ৪৬/৪৭ মিনিটে কেন নয়? এর কারণও পরিষ্কার। ৪৫ মিনিট খেললেই সেটা অর্ধেক ম্যাচ খেলানো হয়। তাই অ্যাথলেটিকো ম্যানেজমেন্ট নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থায় রাখতে প্রতি ম্যাচেই ৬০/৬১ মিনিটে গ্রিজম্যানকে নামাচ্ছে।
অবশ্য অন্য কথা বলছে বার্সা। তারা দাবি করছে, গ্রিজম্যানের মধ্যেই ৮১ শতাংশ ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এখন ক্লজের শর্তানুযায়ী তাদের ৪০ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে। এ নিয়ে তারা অ্যাথলেটিকোর বিরুদ্ধে মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্যদিকে, অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ বলছে, এই শর্ত তখনই কার্যকর হবে যখন গ্রিজম্যান ৫০% ম্যাচ অন্তত ৪৫ মিনিট খেলবে।
তবে এতসব শর্তের মাঝেও অ্যাথলেটিকো ম্যানেজার দিয়েগো সিমিওনে দুই বছর লোন চুক্তি শেষ হওয়ার পর গ্রিজম্যানকে রিটেইন করতে ইচ্ছুক। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিজের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
অ্যাথলেটিকো প্রেসিডেন্ট সেরেজো এনরিকে অবশ্য এ ব্যাপারে তেমন আশার কথা শোনাতে পারেননি। তিনি মনে করেন, গ্রিজম্যান অবশ্যই দলের শক্তি বাড়াবে। কিন্তু তাকে রাখার জন্য তাদের ৪০ মিলিয়ন খরচ করতে হবে। যেটা এই মুহূর্তে সহজ না।
এমন ক্লজের বেড়াজালে ক্ষতিটা হচ্ছে গ্রিজম্যানেরই। সামনে বিশ্বকাপ। কিন্তু এ সময়টাতেই তিনি প্লেয়িং টাইম পাচ্ছেন না। এর অর্থ টানা ২ মৌসুম ৯০ মিনিটের কোনো ম্যাচ না খেলেই তাকে বিশ্বকাপ খেলতে হবে। এটা এক অর্থে তাঁর বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য অন্তরায়। আরেকদিকে একই সাথে ফ্রান্স একাদশে তার জায়গা পাওয়া নিয়েও তৈরি হতে পারে অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া অ্যাথলেটিকো যদি রিটেইন না করে তাহলে মৌসুম শেষে কোথায় যাবেন তিনি? বার্সায় ফিরলেও একাদশে তাঁর নিশ্চিতভাবেই সুযোগ মিলবে কম। তাই ইউরোপের বড় দলগুলোতে সেভাবে তাকে দেখা নাও যেতে পারে।
২০১৬ সালের ইউরো ফুটবলে গোল্ডেন শ্যু আর গোল্ডেন বল, দুটোই জিতেছিলেন গ্রিজম্যান। ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালেও করেছিলেন গোল। তারপরও এক সময়ের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ব্রাত্য হয়ে রয়েছেন দলে। হোক সেটা একটা ক্লজের শর্তের কারণে, কিন্তু ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ যে তিনি ইতোমধ্যে ফেলে এসেছেন-সেটা নি:সন্দেহে বলা যেতে পারে। আপাতত চোখ রাখা যাক, ভবিষ্যতের ফুটবল হাওয়া তাকে কোথায় নিয়ে যায়?