কি অদ্ভুত প্রত্যাবর্তনের মঞ্চায়ন! টুর্নামেন্টে ভিন্নতা নেই, ভিন্নতা নেই প্রতিপক্ষে। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিতে পারাটা তো সবসময়ই বেশ মধুর। ক্রিকেট মাঠে সে বিষয়টা যেন মধুরতা ছড়ায় বহুগুণ। লড়াইটা তো হয় সমানে সমান। কেউ তো এক ইঞ্চি গাফিলতির জায়গা ছেড়ে দিতে চাননা। আর বিষয়টা তো রীতিমত ঐতিহ্যের লড়াই। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের শুরুটা তো আজ থেকে নয়।
রাজনীতির টেবিল থেকে ময়দান। বর্ডার থেকে শরীরের প্রতিটি রন্ধ্র। লড়াইটা সবখানেই হয়। আর দুই দলই চায় দিন শেষে নিজেদের ঝান্ডাটা উড়ুক সবার উপরে। এই দুই দলের লড়াইয়ের জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকা দর্শকদের চোখে প্রশান্তির পরশই যেন বুলিয়ে দিয়ে গেল এবারের এশিয়া কাপ। দুইবার এই দুই দলের লড়াই দেখা তো যেন ক্রিকেট ভক্তদের জন্যে প্রিয়তমার চোখে ডুবে যাওয়ার চাইতেও বেশি স্বস্তির।
পাল্লাটাও বেশ একটা সমান্তরাল অবস্থানে বিরাজমান। ভারটা যে দুই পাল্লাতেই সমান। ১-১ দুই দেখার ফলাফল। তবে ভারতের পক্ষে পাল্লাটা সুপার ফোরের ম্যাচে ভারি হলেও হতে পারত। কিন্তু একটা ক্যাচ! একটা ক্যাচই যেন বদলে দিয়েছিল ম্যাচের পুরো দৃশ্যপট। আর্শদ্বীপ সিংকে নিশ্চয়ই সারারাত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সেই বেদনাতুর মুহূর্ত।
আর্শদ্বীপ সেই মুহূর্তটা ভুলতে চাইলেও তো সোশ্যাল মিডিয়া অন্তত তাঁকে সে দৃশ্য ভুলতে দেবে না। ম্যাচে তখন টানটান উত্তেজনা। খেলার ফলাফল যেকোন দিকে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। ঠিক সে সময় আর্শদ্বীপ ফেলে দিয়েছেন আসিফ আলীর ক্যাচ। আর যা হওয়ার তাই হয়েছে। সেই ক্যাচ ফেলে দেওয়ার ফলেই মোমেন্টামের পুরোটুকু চলে যায় ভারতের বিপক্ষে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমনসব ক্যাচই তো বদলে দেয় ম্যাচের পুরো ফলাফল।
শূন্যরানে প্যাভিলনে ফিরে যেতে পারতেন আসিফ। রবি বিষ্ণইয়ের করা বলে সজোরে ব্যাট চালান আসিফ। তবে কাজের কাজটা ঠিক মত হয়নি। ব্যাটের খোঁচা লেগে বল আকাশ পানে উড়তে উড়তে চলে যায় শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলের দিকে। সেখানেই ফিল্ডিং করছিলেন আর্শদ্বীপ। অতীব সহজ এক ক্যাচ। তিনি তা ফেলে দিলেন হেলায়। তাঁর শরীরি ভাষায় কেমন একটা গাছাড়া ভাব ছিল স্পষ্ট।
সাধারণ দর্শকদের থেকে শুরু করে ভারতের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের বিষয়টা বেশ দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে। এক অনুষ্ঠানে রবিন উথাপ্পা বলেন, ‘ম্যাচের এমন এক পরিস্থিতিতে আপনি যদি একটা ক্যাচ মিস করেন তবে মোমেন্টান একদম আপনার বিপরীত পাশেই চলে যাবে। পেন্ডুলামের মত দোদুল্যমান ছিল। এরপর হুট করেই এক পাশে চলে গেল।’ রবিন অন্তত এটাই মানতে চান যে আর্শদ্বীপের সেই ক্যাচ মিসটাই ভারতের হাত থেকে ম্যাচের ফলাফল বহুদূরে নিয়ে গেছে।
একই সুরে সুর মিলিয়েছেন ভারতের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার চেতেশ্বর পুজারা। তাঁর কাছে ক্যাচ মিসের প্রধান কারণটাই মনে হয়েছে আর্শদ্বীপের শরীরি ভাষা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি খেলোয়াড়েরা ক্যাচ মিস করে। তবে যে মুহূর্তে বল হাওয়ায় ভেসেছে সেই মুহূর্তেই সে ধরে নিয়েছে যে তিনি তালুবন্দি করে ফেলেছেন সে বল। তাঁকে বেশ ক্যাজুয়াল লেগেছে। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ প্রত্যাশিত নয়।’
রবিন উথাপ্পা আর চেতেশ্বর পুজারার মতই অভিমত আপামর ক্রিকেট ভক্তদের। এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দিনে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আসলেই সবার চোখে লেগেছে। অবশ্য অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা তাঁর এই দোষে শাস্তির দেওয়ার পক্ষে নন। আর্শদ্বীপ তরুণ ক্রিকেটার হিসেবেই সবে মাত্র এসেছেন দলে। এমন বহু পরিস্থিতি হয়ত তাঁকে সামাল দিতে হবে। পরিপক্কতা সময়ের সাথেই আসে।
তবে ক্রিকেট বিশারদদের মত, তাঁকে তাঁর ভুলটা অন্তত ধরিয়ে দেওয়া হোক। ট্রলের সাগরে ভাসিয়ে সম্ভাবনার সব প্রদীপ যেন নিভে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখা বড্ড বেশি জরুরি। অবশ্য শেষমেশ আসিফ আলীর উইকেট নিজের পকেটেই পুরেছিলেন আর্শদ্বীপ। তবে ততক্ষণে হয়ে গেছে বড্ড বেশি দেরি।