আসামোয়াহ জিয়ান, এক বৈচিত্রময় বিচরণ

আজ এই ব্যবসা তো কাল সে ব্যবসা। আজ ঢাকায় করছেন শুটিং তো কাল করছেন দুবাইয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের এমন সব কাজ তো সবারই জানা। তবে এমনটা যে একা সাকিব করছেন বা করেন তা কিন্তু নয়। ক্রীড়াঙ্গনে খুঁজলে এমন ব্যবসায়িক খেলোয়াড়ের হদিস বহু পাওয়া যাবে। তেমনই একজন ঘানা জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় আসামোয়াহ জিয়ান।

বয়সটা ৩৬। এখনও তিনি ফুটবল খেলাটা ছেড়ে দেননি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসেনি এমন কোন সিদ্ধান্তের। তবে এর আগেই তিনি ঘানার হয়ে বিশ্বকাপও খেলে ফেলেছেন। ছিলেন আক্রমণের গুরুদায়িত্বে। এমনকি বিশ্বকাপের মহামঞ্চে বেশ ক’খানা গোলও রয়েছে তাঁর। তবে তিনি ফুটবল ছেড়ে নতুন করে মজেছেন টেনিসের নেশায়। তিনি ও তাঁর ভাই মিলে দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছেন টেনিস।

এমনকি ভাইয়ের সাথে টুর্নামেন্ট জেতার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর। তাছাড়া জিয়ান ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে একবার টেনিস অনুশীলনে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মারপিট করার অভিযোগও রয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে তিনি ঠিক কতটা আবেগী টেনিসকে ঘিরে। এমনকি এক সাক্ষাতকারেও তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবল এক নম্বর খেলা এবং আমরা সবাই সম্মান করি বিষয়টাকে। কিন্তু টেনিস হচ্ছে আমার দ্বিতীয় ভালবাসা।’

সে দ্বিতীয় ভালবাসার টানেই তিনি টেনিসের জনপ্রিয়তা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন নিজ দেশ ঘানাতে। সেখানে নিজ কোম্পানির পৃষ্টপোষকতায় আয়োজন করছেন বিভিন্ন টেনিস টুর্নামেন্ট। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও টেনিসের বিস্তার যোগ দিতেও আহ্বান জানাচ্ছেন আসামোয়াহ জিয়ান। ফুটবলার থেকে টেনিস অবধি থেমে যেতে পারতেন তিনি নিশ্চয়ই। না তিনি তো থেমে থাকার পাত্র নন।

ছোট্ট জীবনটায় সম্ভাব্য সকল কিছু যেন তিনি করে যেতে চান। ঘানার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব কাজই করার ইচ্ছে তাঁর। এর ধারাবাহিকতায় তিনি নিজের একটি বাণিজ্যিক বিমান প্রতিষ্ঠানের সূচনা করতে চেয়েছিলেন। তবে মহামারীর থাবায় সেটা আর করা হয়ে ওঠেনি। নাম অবধি তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন। তবে বেবি-জেট’ কোম্পানির কোন উড়জাহাজ ছুঁয়ে দেখেনি শুভ্র মেঘ।

তবে সবচেয়ে সফল তিনি এখন পর্যন্ত হয়েছে একজন সঙ্গীত শিল্পি হিসেবে। তিনি যখন তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে তুঙ্গে তখনই তাঁর বিচরণ শুরু হয় সঙ্গীত অঙ্গনে। পরপর তিনটি গানের অ্যালবাম বের করেন তিনি। সমগ্র ঘানাতে বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে তাঁর সে গানের অ্যালবাম। এইসব ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তাঁর বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। নিজের দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছেন।

এই যে তাঁর প্রচেষ্টার একটা বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে ফুটবলের অবদান। তিনি হয়ত একজন ফুটবলার হিসেবে আলো ছড়াতে না পারলে নিজের দেশের জন্যে তথা নিজের জন্যে এত সব ব্যবসার কথা মাথায়ও আনতে পারতেন না। আফ্রিকার আর পাঁচটা দেশের মতই ঘানার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। এমন পরিস্থিতিতে এত সব কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার ফুরসতটুকু তিনি পেতেন না।

আফ্রিকান ক্লাব লিবার্টি প্রোফেশনালস থেকে ইতালিয়ান ক্লাব উদিনিসে যাত্রা করেন তিনি। সেটাই হয়ত তাঁর ভাগ্য খুলে দেয়। যা কিছু এখন তিনি করছেন তাঁর সবকিছুর পেছনেই হয়ত সে ২০০৩ সালের ইউরোপ যাত্রাই অনেক বড় এক প্রভাবক। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব ঘোরেন তিনি। মাঝে ইংলিশ ক্লাব সান্ডারল্যান্ডে যোগ দেন ক্লাবটির রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার অর্থ ব্যয়ে।

ইউরোপ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য এরপর চীন ঘুরে তিনি দাঁড়ি টানেন বিশ্বভ্রমণের। এরপর ফিরে যান নিজ দেশ ঘানায়। সেখানকার ক্লাব লিজন সিটির হয়ে খেলেন ২০২০-২১ মৌসুম। এর আগে ভারতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও খেলেছেন তিনি। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের হয়ে আট ম্যাচ খেলে চার দফা তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন জালের দেখা।

ফুটবল তাকে সে সাহসটা জুগিয়েছে। তাইতো নিজের পাখা মেলে তিনি গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছেন সবকিছুর। নতুন সব ক্ষেত্রে নিজেকে ঝালিয়ে দেখার প্রচেষ্টা। বাকিটা জীবন তো আর বসে থেকে কাটানো যায় না। সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই একটু বিচরণ করা গেলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link