যে পাত্রে যান, সে পাত্রেরই আকার ধারণ করেন

কখনো তিনে ব্যাট করছেন, কখনো মিডল অর্ডারে, কখনো আবার ফিনিশিংয়ে খেলছেন। বল হাতেও নিজের দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে অলরাউন্ডার হিসেবে যেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন যে পরিপূর্ণ এক প্যাকেজ সেটাই তিনি প্রমাণ করে চলেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি নি:সন্দেহে বেশ ভাল একজন অলরাউন্ডার। তবে রঙিন পোশাকে স্রেফ ভাল বোলার হিসেবেই খেলে আসছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে রঙিন পোশাকে ছিলেন সাদামাটা।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংটা দেখা যেত না অশ্বিনের কাছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) গেল তের আসর ধরে নিয়মিত খেলছেন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। ২০১৮ সালে ৪৫ রানের এক ইনিংস ছাড়া প্রথম ১৭৮ ম্যাচে ছিল না বড় কোনো ইনিংস। সেই অশ্বিন এবারের আইপিএলে ব্যাট হাতেও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায়।

তিনে ব্যাট করে দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে করেছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে লোয়ার অর্ডারে নেমে ৯ বলে ২১ রানের ক্যামিও। এরপর গ্রুপ পর্বে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ফিনিশার হিসেবে নেমে খেললেন ২৩ বলে ৪০ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। শিমরন হেটমায়ারের মত বিধ্বংসী তারকা থাকতেও উপরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় অশ্বিনকে।

টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডার – যেখানেই তিনি সুযোগ পেয়েছেন, করেছেন ঝড়ো ব্যাটিং। রঙিন জার্সিতে অশ্বিন ব্যাটিং সামর্থ্যটা অনেকেরই অজানা। দলে মূলত বোলার হিসেবেই খেলতেন তিনি। আইপিএলেও দীর্ঘ সময় ধরে সেটাই চলছে। ব্যাটার অশ্বিনের উপর ভরসা দেখায়নি দলও। তবে এবারের আইপিএলে ঠিক তার উলটো চিত্র। বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিং দিয়েই মূলত আলোচনায় তিনি।

কি-না করেছেনে এবারের আসরে? নতুন বলে বোলিং, মিডল অর্ডারে বোলিং, ডেথ ওভারে বোলিং – যেখানেই যখন আনা হয়েছে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে দলের আস্থার পূর্ণ প্রতিদানই তিনি দিয়েছেন। স্বীকৃত পাওয়ার হিটারদের চেয়ে আগে নামিয়ে রাজস্থানের ম্যানেজমেন্টও এবার বেশ ভরসা দেখিয়েছে এই অলরাউন্ডারের উপর।

বারো আসরে মোটে ৬৩৯ রান করা অশ্বিন এবারের আসরেই করেছেন ১৮৩ রান। গড় আর স্ট্রাইকও নজরকাঁড়া। ত্রিশের বেশি গড় আর ১৪৬ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি। পুরো আইপিএলে ক্যারিয়ারে মাত্র ১২ ছক্কা হাঁকানো অশ্বিন এবারের আসরেই এখন পর্যন্ত মেরেছেন ৯ ছক্কা; চারের মারও আগের সব আসরের তুলনায় বেশ বেশি। বল হাতে পারফরম্যান্সটাও ঈর্ষণীয়। উইকেটের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও প্রায় সাত ইকোনমিতে বল করেছেন তিনি।

অনুশীলনের সময় ওপেনিংয়েও ব্যাট করেছেন তিনি। বলেছিলেন সুযোগ পেলে সব জায়গায় নিজের সেরটা দিতে প্রস্তুত। বিগ শটে বাউন্ডারি পার করতে পারেন সেই সামর্থ্যও তিনি দেখিয়েছেন। আন্দ্রে রাসেলের পর একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলের এক আসরে দশ উইকেট ও একশো পঞ্চাশ রানের রেকর্ডটাও গড়েন রাজস্থানের এই তারকা অলরাউন্ডার।

কখনো মানকাড আউট, কখনো রিটায়ার্ড আউট, কখনো আবার ব্যাটিং স্টান্স, কখনো আবার ব্যাটিং জাদু – অশ্বিন আলোচনায় থাকছেন নিয়মিতই। যেখানেই চোখে যায় সেখানেই যেন আছেন অশ্বিন। টেস্টে অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছে অনেক উপরে। রঙিন পোশাকে তার নামের পাশে অলরাউন্ডার শব্দটা এতদিন যথার্থ ছিল না। তবে পরিশ্রম আর নিজের সেরাটা দিয়ে রঙিন জার্সিতেই ব্যাট হাতে তিনি এখন বেশ পরিণত। অলরাউন্ডার অশ্বিন বলতে এখন হয়ত আর কারও দ্বিধা হবে না?।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link