আকাশ দীপ বাইশ গজে এসেছিলেন ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হয়ে। প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন সম্ভবত ভারতের ‘আনসাং হিরো’ হয়ে। সংখ্যার বিচারে তার ৬১ রানের ইনিংসটির বিস্তৃতি হয়ত মাঝারি পরিধিতে সীমাবদ্ধ। তবে ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় এই ইনিংসের মাহাত্ম্য আকাশ সমান বিশাল।
লন্ডন ওভালের টেস্ট ম্যাচটি ভারতের জন্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজের শেষ ম্যাচ। জিততে সমতায় শেষ হবে, হারলেই সিরিজ জয়ের উল্লাস করবে ভারত। এমন একটা ম্যাচে একজন লেজের দিকের ব্যাটারের বড় ইনিংস প্রতিপক্ষের জন্যে পীড়াদায়ক। সেদিক থেকে আকাশ দীপের ইনিংসটি বেশ গুরুত্ববহ।
আকাশের কাজ ছিল স্রেফ দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলাটুকু কাটিয়ে দেওয়া। উইকেট আগলে রেখে একজন ব্যাটারকে আউট হওয়ার মুখ থেকে বাঁচানো। সে কাজটা দারুণভাবে করেছেন তিনি। তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের উপর একটা বাড়তি আস্তরণ ঢেলেছে তার খেলা ৯৪টি বল।
এই ৯৪ বলে তিনি ইংরেজ বোলারদের বিপক্ষে জিতে গেছেন এক মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে। তৃতীয় দিনের সকাল বেলায় ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক পরিকল্পনা ছিল দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নেওয়া। সেই শুরুটা তারা নিশ্চয়ই করতে চেয়েছিলেন আকাশ দীপকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে।
কিন্তু আকাশ তেমনটি করতে দেননি। তিনি বরং দেখিয়েছেন দৃঢ়তা। স্বল্প দৈর্ঘ্যের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন। এই ধারা অব্যাহত না হলে এটাই হতে পারে তার শেষ হাফসেঞ্চুরি। যেহেতু তিনি বোলার। তার মূল কাজটাই বল হাতে নিজ দলকে উইকেট এনে দেওয়া। অতএব ব্যাট হাতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ তার হরহামেশাই আসবে না।
এমন একজন ব্যাটারকে আউট করতে ইংল্যান্ডকে প্রায় ১৬ ওভার বল করতে হয়েছে। সেখানেই পরিকল্পনার বিচ্যুতি ঘটেছে। ইংল্যান্ডের বোলাররা অস্বস্তিতে ভুগেছেন। একজন ব্যাটারের শতকের তুলনায় একজন বোলারের ৪০/৪৫ রান পীড়া দেয় ব্যাপক। তাতে করে ইংলিশ বোলাররা নিজেদের সক্ষমতার উপর সন্দেহ করেছেন। এই সন্দেহের আবহ নিশ্চিতভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দলের মাঝে। চোখে-মুখেই তো ভেসে ওঠে মনের অভিব্যক্তি।
ইংল্যান্ড স্কোয়াডে সেই সন্দেহ ইঞ্জেক্ট করতে পারা আকাশ দীপের প্রাপ্তি। নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সেই সামর্থ্যের সংশয় ইংল্যান্ডকে ম্যাচ পরাজয়ের দিকেও ধাবিত করতে পারে। আর তেমনটি ঘটলেই বরং আকাশের ৬১ রান, ক্যারিয়ারের বিশাল বড় এক প্রাপ্তির অধ্যায় হয়ে রইবে।