ঘরে-বাইরে, কোথাও নেই পেশাদারিত্ব

মাঠের ক্রিকেট, এখন আর শুধু মাঠে সীমাবদ্ধ থাকে না। টেলিভিশনের কল্যাণে ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। উপমহাদেশের ক্রিকেট জ্বরে পোড়ে ইউরোপ কিংবা আমেরিকার ক্রিকেট সমর্থক। ক্রিকেট মাঠের খুঁটিনাটি এখন থাকে সবার নখদর্পণে। বড় দলগুলোর সব ধরণের খবরা খবর সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রধান আকর্ষণ। ক্রিকেট এখন বিশ্বের আলোচনার খোরাকটা মেটায়।

তবে দিন শেষে, ক্রিকেটটাও এক পেশাদার কর্ম। আর পাঁচটা পেশার মত করেই এখন ক্রিকেটের বিস্তার পুরো বিশ্বব্যাপী। পেশাদারিত্বের বুলি আওড়ানো হয় এখন খুব সহসাই। তবুও খেলোয়াড়রা যেন পেশাদার হতেই পারছেন না। বিশেষ করে বলতে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের কথা। খেলোয়াড়দের মধ্যে এই পেশাদারিত্ব নামক বস্তুটার বড্ড অভাব।

বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ক্রিকেট শিখতে থাকা প্রতিটা ক্রিকেটারের স্বপ্নই শুধু জাতীয় দল। সেখানে পৌঁছানো মাত্রই যেন সব লক্ষ্য হাসিল। অথচ সেখান থেকেই শুরু হবার কথা ছিল আসল লড়াইয়ের। নিজের পেশাদার সত্ত্বাটার পরিচয় দেওয়ার। তবে কেন যেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চাহিদাটা অল্পতেই সীমাবদ্ধ।

এর থেকেও ভয়ানক এক সংস্কৃতি যেন গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঘিরে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যরাও যত্রতত্র, ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট মন্তব্য করে বসছেন। এই দৃষ্টিকটু দৃশ্যের মঞ্চায়ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর নাটের গুরু হিসেবে ধরা যেতে পারে উম্মে আহমেদ শিশিরকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানের স্ত্রী তিনি। সর্বপ্রথম সাকিব ইস্যুতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করে বসেন। সেই যে শুরু। তা আর থামার নামগন্ধ নেই।

হালের আলোচিত ঘটনা হতে পারে টি-টোয়েন্টি দল থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল কাওসার মিষ্টির করা মন্তব্য। তবে তিনি অবশ্য বলতে চাইছেন সে বিষয়ে তিনি কোনই মন্তব্য করেননি। তবে সেই পোস্টের কমেন্টবক্সে তাঁর বোন ও বাংলাদেশের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের স্ত্রী জান্নাতুল কেফায়াত মন্ডির করা মন্তব্য সব কিছুই খোলাসা করে দেয়। তাঁরা দুইজনই বেশ ক্ষুব্ধ।

সাম্প্রতিক সময়ে বহু সমালোচনার পর মুশফিকুর রহিম অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। এরপরই বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। এই নিয়ে যেন নিজেদের আবেগটুকু আর সংবরণ করতে পারেননি তাঁদের দুইজনের স্ত্রীরা। তবে এই বিষয়টা যে বড্ড বেশি দৃষ্টিকটু তা কি তাঁরা বোঝেন?

হয়ত বোঝেন অথবা বোঝেন না। বাঙালি জাতি বেশ আবেগি। জন্মলগ্ন থেকেই হয়ত এই কথা শুনে আসছেন সকলে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই আবেগটাকে তো রাখতে হয় নিজের আয়ত্ত্বে। তবে না ঠিক এই জায়গায় আমরা পেশাদার হতে পারি না। শুধু আমাদের ক্রিকেটাররা নন, আমরা সাধারণ মানুষরাও নিজের কর্মক্ষেত্র আর পরিবারকে আলাদা করতে পারি না। দুইটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায়।

তবুও আমরা দিন শেষে তালগোল পাকিয়ে, অফিস নিয়ে চলে যাই বাসায় আর বাসা নিয়ে আসি অফিসে। অফিসের একটা বিরক্তিকর দিনের প্রভাবটা ভোগ করতে হয় পরিবারের সদস্যদের। তবে তাঁরা কি সেটার প্রাপ্য? অবশ্যই না। আবার বাসার কোন দুশ্চিন্তা নিয়ে আমরা হাজির হই অফিসে। অধিনস্তদের উপর দিয়ে চলে স্টিম রোলার। এটাই যেন এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

আমাদের কোন ক্ষেত্রের লোকজনই আসলে দিন শেষে পেশাদার হতে পারেনি। তবে ক্রিকেটাররা রীতিমত পাবলিক ফিগার। তাঁদেরকে অনুসরণ বা অনুকরণ শুধু আমাদের দেশের লোকজন করেন না। সেটার পরিধি পুরো বিশ্বব্যাপী। তাই অন্তত তাঁদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খানিকটা দায়বদ্ধতা থাকে। সে দায়বদ্ধতা থেকে এমন ধরণের অবান্তর মন্তব্য তাও আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ তো করা যেতেই পারে।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁরা কি শুনবেন সে অনুরোধ? এই দৃষ্টিকটু সংস্কৃতির অবসান কি ঘটবে সহসাই? নাকি বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতার মত করে তা ছড়িয়ে পড়বে পুরো ক্রিকেটে? কলুষিত করবে টাইগার ক্রিকেটকে। এসব প্রশ্নের উত্তর তোলা থাক সময়ের কাছে। হয়ত টনক নড়বে একদিন। অপেক্ষা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link