শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান কে? – এই প্রশ্নের উত্তরটা আসলে থেমে যায় দু’জনের মধ্যে এসে। সেই দু’জন হলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা। কে এগিয়ে দু’জনের মধ্যে? – এই প্রশ্ন করলে বিস্তর লেখা প্রসব করা যাবে – কিন্তু, প্রশ্নের কোনো সুরাহা হবে না।
তবে, দুই বন্ধুর ক্যারিয়ারটা এক করুণ অপ্রাপ্তিতে ঠাঁসা ছিল ২০১৪ সাল অবধি। ২০০৭ কিংবা ২০১১ – ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দু’টি বিশ্বকাপ ফাইনাল তাঁরা খেলেছেন। প্রথমবার প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি, আরেকবার স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামে ভাল অবস্থানে থাকার পরও মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা গৌতম গম্ভীরের বীরত্বে তাঁদের অমরত্ব পাওয়া হয়নি।
শুধু কি ৫০ ওভারের ক্রিকেটে, ২০ ওভারের ক্রিকেটেও দৃশ্যটা একই রকম। ২০১২ সালে নিজেদের দেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফাইনালেও চলে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পৃথিবী অপেক্ষায় ছিল – এবার অন্তত বিশ্বকাপের আক্ষেপ ঘুঁচবে দুই কিংবদন্তির। দুই বন্ধু শিরোপা হাতে নিয়ে উৎসব করবেন দেশের মাটিতে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে উৎসবের মঞ্চ তৈরিই ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করে করতে পেরেছিল মাত্র ১৩৭ রান। কিন্তু, সামান্য সেই লক্ষ্যও টপকাতে পারেনি লঙ্কান সিংহরা। হেরে গিয়েছিল ৩৬ রানের ব্যবধানে। নারাইন নয় রানে তিন উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ান উত্থানের নেতৃত্ব নেন।
তবে, লড়াইটা থামাননি কেউই! মাহেলা জয়াবর্ধনে কিংবা কুমার সাঙ্গাকারা – দু’জনই বুঝেছিলেন বেঁচে থাকার মানেই হল লড়াই করা। সেই লড়াইটা তারা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। তার পূর্ণতা আসে ২০১৪ সালে, ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দিনটা ছিল ছয় এপ্রিল!
যদিও, সামনে ছিল শক্ত প্রতিপক্ষ। সেই ভারত – তিন বছর আগে যাদের হাতে খোঁয়া গেছে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের শিরোপা। তবে, এবার আর ভুল করেনি লঙ্কানরা। ভারতের করা ১৩০ রানের জবাবে ১৩ বল আর ছয় উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।
৫২ রানের ইনিংস খেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন কুমার সাঙ্গাকারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলক পূরণ করেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে নিয়েই সেবার ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ময়দানকে বিদায় জানান দুই বন্ধু – সাঙ্গা ও মাহেলা। মানে, ওই ফাইনাল ম্যাচটাই তাঁদের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।
এই বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে একটা ইতিহাস না বললেই নয়। সেই বছর প্রায় চার বছর ধরে বাংলাদেশে ছিল লঙ্কান দল। সফর শুরু হয় দ্বিপাক্ষিক সিরিজ দিয়ে। সেটাতে সব ফরম্যাটেই জিতে তাঁরা।
এরপর এশিয়া কাপ। সেখানেও বিজয়ী দলের নাম শ্রীলঙ্কা। এরপর বিশ্বকাপ। ফলে কন্ডিশনের সুবিধাটা শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভাল আর কেউই সেবার নিতে পারেনি।
মজার ব্যাপার হল, সেই বিশ্বকাপটা শ্রীলঙ্কা খেলতে গিয়েছিল দীনেশ চান্দিমালের অধীনে। তবে, খুব বাজে ফর্মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তিনি মাঠে যতটুকু যাও ছিলেন, নেতৃত্বের কাজটা সাঙ্গা-মাহেলাই সামলাচ্ছিলেন।
ফাইনালে আর সেটাও সম্ভব হয়নি। হুট করে, অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় লাসিথ মালিঙ্গাকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় মালিঙ্গার। আর অভিষেকেই তাঁর হাতে ওঠে শিরোপা। যদিও, যথারীতি সেই ম্যাচেও আড়াল থেকে সব সামলান দুই কিংবদন্তি।
কে জানে, আজ তাঁরা নেই বলেই হয়তো লঙ্কান ক্রিকেটে কোনো সাফল্য নেই!