ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য নতুন কিছু নয়। দশকের পর দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে একক বিচরণ তাদের। বিশেষ করে আইসিসি টুর্নামেন্টে, অজিদের রেকর্ড চোখ ধাঁধানো। চলুন দেখা যাক সেসব অজি অধিনায়কদের যাদের হাত ধরে এসেছে আইসিসি ট্রফি।
- অ্যালান বোর্ডার
প্রাপ্তির সূচনাটা হয়েছিল অ্যালান বোর্ডারের হাত ধরে। ১৯৮৭ সালে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে অস্ট্রেলিয়া। দলের নেতৃত্বে ছিলেন অ্যালান বোর্ডার। মাঠে তার লড়াকু মনোভাব, আক্রমণাত্মক মানসিকতা এবং দৃঢ় নেতৃত্ব অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেয় প্রথম বিশ্বজয়ের স্বাদ। সেই জয়ের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে অজিদের বিজয়ী মানসিকতা, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যান তিনি।
- স্টিভ ওয়াহ
১৯৯৯ বিশ্বকাপে অজিদের নেতৃত্ব দেন স্টিভ ওয়া, আর তার হাত ধরেই শুরু হয় ‘অজেয় অস্ট্রেলিয়া’র গল্প। টুর্নামেন্টজুড়ে তার দল ছিল অবিশ্বাস্যভাবে ধারাবাহিক। চাপের মুহূর্তে কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে হয়, তার আদর্শ উদাহরণ ছিলেন স্টিভ ওয়া। তার সময়েই শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণযুগ, যার প্রভাব পড়ে পুরো এক দশক ধরে।
- রিকি পন্টিং
স্টিভ ওয়ার উত্তরসূরি হিসেবে আসেন রিকি পন্টিং। আর তিনি যেন সেই স্বর্ণযুগকে পৌঁছে দেন সর্বোচ্চ শিখরে। ২০০৩ এবং ২০০৭—টানা দুটি বিশ্বকাপ তার নেতৃত্বে জেতে অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, ২০০৬ এবং ২০০৯ সালে দলকে জেতান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। পন্টিংয়ের অধিনায়কত্ব বলতেই ছিল আক্রমণাত্মক ক্রিকেট, দুর্দান্ত কৌশল এবং নিখুঁত পরিকল্পনা। তাঁর আমলে অস্ট্রেলিয়া হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
- মাইকেল ক্লার্ক
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সে আসরেই দলকে নেতৃত্ব দেন মাইকেল ক্লার্ক। স্বাগতিক হিসেবে চাপে থাকলেও ক্লার্কের নেতৃত্বে দল একের পর এক ম্যাচ জিতে পৌঁছে যায় ফাইনালে। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ক্লার্ক, এ যেন ট্রফি হাতে নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করা এক রূপকথার গল্প।
- অ্যারন ফিঞ্চ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি দীর্ঘদিন ছিল অস্ট্রেলিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু ২০২১ সালে দুবাইয়ে সেই অধরা ট্রফি তুলে ধরেন অ্যারন ফিঞ্চ। আধুনিক সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা কৌশলী অধিনায়ক হিসেবে ধরা হয় তাকে। তার নিখুঁত পরিকল্পনা ও আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্বে সেই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া জেতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
- প্যাট কামিন্স
সবশেষে যিনি এসেছেন, তিনিই আবার রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস। একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে অধিনায়কত্ব নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন প্যাট কামিন্স। কিন্তু ২০২৩ সালে সেই সব সন্দেহকে উড়িয়ে দিয়ে এক বছরে জিতে নেন দুটি বড় ট্রফি—ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং একদিনের বিশ্বকাপ। বল হাতে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, দেখিয়েছেন চাপের মুহূর্তে কেমন করে লড়তে হয়।
এই ছয় অধিনায়কই নিজেদের প্রজন্মে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকে পৌঁছে দিয়েছেন সর্বোচ্চ উচ্চতায়। ট্রফি জয় শুধু তাদের কৃতিত্ব নয়, বরং পুরো দলের মানসিকতা, পরিকল্পনা আর ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে তারা অমর হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।