বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, বিশ্বাস করেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। লন্ডনের সকালে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙেই মোবাইলের ওয়ালপেপার পাল্টেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘বিশ্বাস!’ ভেতরের আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। বলেছিলেন, ‘বাবা দেখছে ওপর থেকে। এই দিনটা আসবে বলেই তো তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, পরিশ্রম করতেন। সব কিছু ভুলে শুধু তাঁর জন্য বোলিং কর।’
এই একটা কথাই যেন তাতিয়ে দেয় সিরাজকে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন মোহাম্মদ সিরাজ। লন্ডনের সকালে নিয়েছেন তিনটা জরুরী উইকেট। পুরনো বলে স্যুইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট। ম্যাচে নেন নয়টা উইকেট।
ম্যাচ শেষে বললেন, ‘নিজের ওপর বিশ্বাস করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করেছিলাম, আমি পারব। আমরা পারব। শেষ হওয়ার আগে শেষ বলতে আমি রাজি ছিলাম না।’ সিরাজ বরং স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের, ভারত সিরিজ জিততে না পারলেও নাটকীয় একটা ড্র নিশ্চিত করতে পেরেছে।
পুরো সিরিজ জুড়ে ছিলেন নিজের ফর্মের চূড়ায়। নয় ইনিংসে নেন ২৩ উইকেট। সিরিজে যে জাসপ্রিত বুমরাহর সার্ভিস ভারত পুরোপুরি পায়নি, সিরাজ সেটা বুঝতেই দেননি।
রবী শাস্ত্রী বললেন, ‘এখন আর নিশ্চয়ই সিরাজ পুলিশের ডিএসপি থাকবে না। দেশে ফেরার পর নির্ঘাত ওর প্রমোশন হয়ে যাবে।’ আসলে শুধু পুলিশে নয়, ক্রিকেটের ময়দানেও প্রমোশন হয়ে গেল সিরাজের। এরকম একটা স্পেল, এরকম একটা ম্যাচ জয় যেকোনো পেসারের জন্যই তো স্বপ্ন। সত্যি,এই দিনটার জন্যই দিন ভর অটো চালিয়ে ঘাম ঝরাতেন সিরাজের বাবা মোহাম্মদ গাউস।
বাবার শেষ সময়ে সিরাজ ছিলেন না পাশে। তিনি তখন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে। বাবা হাসপাতালে শুয়ে পত্রিকা পড়তেন। ছেলেকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘সবগুলো খবরের কাগজে তোমার ছবি ছাপা হয়েছে।’
আজ আবারও শুধু ভারত নয়, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মাধ্যমে থাকবেন সিরাজ। কিন্তু, খবরের বিষয় তিনি নন, তাঁর বাবা। কিন্তু, খবরগুলো পড়ার জন্য সেই মানুষটি নেই। আহারে জীবন! সব পেলে নষ্ট জীবন!