বাবরের নেতৃত্ব সংকট!

এশিয়া কাপ, এরপর ঘরের মাটিতে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ- সব মিলিয়ে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে যেন বের হতে পারছে না পাকিস্তান। দুটিতেই শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচটি হেসেখেলেই জিতেছে ইংল্যান্ড। ফলে, ১৭ বছর পর পাকিস্তানে এসে সিরিজ জয়ের বড় তৃপ্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছে ইংলিশরা। 

ছয় ম্যাচ শেষে সিরিজের চিত্র ৩-৩ এ থাকায় লাহোরে অঘোষিত ‘ফাইনাল’-এই রূপ নিয়েছিল শেষ ম্যাচটি। আর সে ম্যাচটিতে ৬৭ রানের জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।  টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ২০৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় মইন আলির দল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানেই থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।

২১০ রানের লক্ষ্য। অথচ ম্যাচের বাকি সময়ে এক বারের জন্যও মনে হয়নি, ২০০ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তান জিততে নেমেছে। এমন সমীকরণে শান মাসুদ ৪৩ বলে খেলেছেন ৫৬ রানের ইনিংস, ইফতিখার আহমেদ ১৬ বলে ১৯ আর খুশদিল শাহ ২৫ বলে করেছেন ২৭। প্রত্যেকটিই পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্থর ইনিংস। পাকিস্তানের ভঙ্গুর মিডল অর্ডারের স্পষ্ট ছাপ এই ইনিংসেই প্রতীয়মান হয়েছে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরামও নিজের দেশের এমন পারফরম্যান্সে বেশ খানিকটা চটেছেনও।

তিনি পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন,  ‘আপনি যদি ২০০ রান তাড়া করতে নেমে ২ উইকেট হারান, সঙ্গে ১০ ওভারও হারান। কেউ পাত্তা দেবে না। মানুষ আপনাকে সমর্থন করবে। কিন্তু এভাবে কেউ খেলে? কেউ আপনাকে সমর্থন করবে না। আমি বাবর হলে বার্তা দিতাম। ১২ ওভারে আউট হয়ে যাও, নয়তো জেতার চেষ্টা কর। এমন একতরফা খেলা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে।’

এর আগে শোয়েব আখতার, ইনজামাম উল হক, সালমান বাট, মঈন খান, আকিব জাভেদ ও অন্য সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও পাকিস্তানের বর্তমান দল ও বাবরের অধিনায়কত্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ব্যাটিংয়ের ফর্ম ও অধিনায়ক হিসেবে বাবরের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে এশিয়া কাপের পর কথা বলেছিলেন সাবেক উইকেট রক্ষক কামরান আকমালও। তিনি বাবরকে অধিনায়কত্ব না নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, ফয়সালাবাদে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চলছিল, যখন বাবর টস করতে নামে তখনই আমি জানলাম তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমি মনে করি না তোমার অধিনায়ক হওয়ার জন্য এখন সঠিক সময়। আগামী দুই তিন বছর নিজের সেরা পারফরম্যান্স করো। ব্যাটিং লাইনআপ তোমার ওপর নির্ভরশীল। আগে বিরাট কোহলির লেভেলে পৌঁছাও। ততদিনে তুমি ৩৫-৪০ সেঞ্চুরি করবে এবং অধিনায়কত্ব উপভোগ করতে পারবে। এটা ছিল তার সিদ্ধান্ত, তার কাছের মানুষেরা হয়তো তাঁকে অধিনায়কত্ব নিতে বলেছে।’

অবশ্য পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে বাবর আজমই সবচেয়ে সফল। তাঁর অধিনায়কত্বে ৫৪ ম্যাচের ৩২ টিতে জিতেছে পাকিস্তান। জয়ের সংখ্যায় বাবর টপকে গিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকেও। সরফরাজ আহমেদ অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ম্যাচ জিতেছে ২৯ টিতে। 

বাবর আজমের অধিনায়ক হিসেবে সফল হওয়ার ব্যাপারে আকমল বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে। এখন যদি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তান আরও পেছনে পড়ে যাবে। আমি তাঁকে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে বলেছিলাম। তাঁর ধারাবাহিকতা ছিল দারুণ। লোকেরা তাঁর ব্যাটিং উপভোগ করতো। অধিনায়কত্ব সবসময় চাপের, যেটা তাঁর ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলেছে, একই সাথে অ্যাপ্রোচেও।’

সাবেক গ্রেটদের তীর্যক সমালোচনায় পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম যে এই মুহূর্তে একটু চাপেই আছেন, বলা যায়। তবে তাঁর চাপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে মিডল অর্ডারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটারই আস্থার প্রতিদান দিতে না পারায়। বাবর আর রিজওয়ান আউট হয়ে গেলেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ। বিশ্বকাপের আগে এটা খুব শঙ্কার বিষয়। শুধু বোলিং লাইন আপ আর ওপেনিং ব্যাটার দিয়ে তো আর বেশিদূর এগোনো যায় না। তাই অধিনায়ক হিসেবে বাবর আজমকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিশ্বকাপের আগেই। নয়তো সমালোচনার তীর প্রবল থেকে প্রবলতর বেগে ধেয়ে আসবে তাঁর দিকে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link