ছায়ায় ঢাকা বাদশাহ

সাধারণত বড় মঞ্চেই পারফরম করতে উদ্গ্রিব হয়ে থাকেন অধিকাংশ ক্রিকেটার। বাবর আজমের তো এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তিনিও তো নিশ্চয়ই চান নিজের ক্যারিয়ারটায় লাগুক সব ধরণের রঙ। একজন খেলোয়াড় হিসেবে অর্জনের সব সীমা ছাড়িয়ে অসীমের বুকে লেখা থাকুক – ‘বাবর আজম’।

তবে ইচ্ছে আর বাস্তবতার মাঝে রয়েছে বিস্তর ফাঁরাক। সে কথাটাই যেন আবারও প্রমাণ হয়েছে এশিয়া কাপের মঞ্চে। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টির সেরা ব্যাটার বাবর আজম। তিনি আবার পাকিস্তান দলের অধিনায়ক। দায়িত্বের যেন শেষ নেই। ওপেনিংটাও যে তাকেই করতে হয়। দায়িত্ব ভারেই যেন খানিকটা নুইয়ে পড়ছে বাবরের দুর্দান্ত ব্যাটার সত্ত্বা।

এইতো এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগেও তিনি তো ছিলেন দুরন্ত ফর্মে। ছন্দে থাকা বাবরকে দেখা তো রীতিমত চোখের জন্যে প্রশান্তি। সেই প্রশান্তির পরশ তো তিনি বুলিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মত বাঘা দলের বিপক্ষে। এশিয়া কাপে খেলতে আসার আগের তিন টি-টোয়েন্টি ইনিংসের দুইটিতে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপের মঞ্চে কেমন যেন অচেনা তিনি।

নিজের নামের ছায়াতলেই এখন পর্যন্ত অবস্থান তাঁর। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে দশ উইকেটে হারানোর ম্যাচে তো এই বাবরের ব্যাটটাও তো চলেছিল একেবারে অগ্নিবাণের মত করে। সেই বাবর ভারতের বিপক্ষে তো বটেই খর্ব শক্তির দল হংকংয়ের বিপক্ষেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাঁর এমন হারিয়ে যাওয়া বা একটা খোলসের মধ্যে আটকে থাকার কারণটা কি!

বাবর আজম পারফরম করতে না পারলেও তাঁর দলের প্রায় প্রতিটা ক্রিকেটার নিজ নিজ জায়গা থেকে জ্বলে উঠছেন সময়ের প্রয়োজনে। কখনো রুদ্রমূর্তি ধারণ করছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। আবার ম্যাচের গতিপথ বদলে দিচ্ছে আসিফ আলী। দলের ব্যাটিং অর্ডারকে শুরু থেকে শুরু করে একটা লম্বা সময় অবধি আগলে রাখছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবুও বাবরের ব্যাট ঠিক হাসছে না।

এশিয়া কাপের তিন ম্যাচ মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে তিনি রান করেছেন ৩৩ রান। এ কোন বাবর! এই বাবরকে তো চেনা তো দায়। নিজের দিনে তিনি ঠিক কতটা বিধ্বংসী তা তো সবারই জানা। নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বা বিবরণ দেওয়ার তো বিশেষ প্রয়োজন নেই। তবে এই জ্বলতে না পারার পেছনে কারণ খুঁজে পাওয়াও তো কষ্টকর।

এই আরব আমিরাতের মাঠে তো আর কম সময় ধরে খেলেননি বাবর। তাছাড়া প্রতিপক্ষও যে একেবারে অচেনা তাও নয়। তবুও পারছেন না তিনি। ব্যাট নিয়ে বাইশ গজে দৃষ্টিনন্দন রান ফোয়ারার দেখা মিলছে না। অন্যদিকে একটা লম্বা সময় ধরে অফফর্মে থাকা বিরাট কোহলি এই এশিয়া কাপের মঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন নিজের প্রত্যাবর্তনের জন্যে।

দুই খানা হাফসেঞ্চুরির দেখা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন বিরাট। তাঁদের দ্বৈরথটা তো দেখার এর থেকে ভাল সুযোগ আর মেলার কথা নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষেও একটা দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বিরাট। সে ম্যাচেও বাবর ছিলেন নিষ্প্রভ। কিন্তু বাবরের যে ফেরাটা খুব বেশি জরুরি।

তিনি নিজেও হয়ত সেটা আন্দাজ করতে পারেন। তিনি নিজেও হয়ত ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। এবারের এশিয়া কাপে পাকিস্তান ফেভারিট। দলে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেদের সেরা ছন্দে রয়েছেন। সবাই শিরোপা জয়ের জন্যে মুখিয়ে রয়েছেন। উজ্জীবিত এই দলটাকে তো সামনে থেকে বাবরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। হয়ত বাবর ফিরবেন। তাঁর প্রত্যাবর্তনটা এশিয়া কাপের সবচেয়ে আলোচিত এক ঘটনা হয়েই রইবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link