পাকিস্তানের কোনো আনন্দে ভারতীয়দের উল্লাস করাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার না। তবে এই কাজটাই করলেন আজ ভারতীয় স্পিনিং গ্রেট রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টুইটারে বাবর আজমের নামটা লিখে দুটো করতালি চিহ্ন দিয়েছেন। এরপর লিখেছেন, আগামীকাল একটা রোমাঞ্চকর শেষ দেখার অপেক্ষায়।
হ্যাঁ, কাল পাকিস্তানের সামনে, বাবর আজমের সামনে ইতিহাস নতুন করে লেখার সুযোগ। পাশার দান বদলে গেছে। হঠাৎ করেই করাচিতে অলৌকিক এক জয়ের হাতছানি টের পাচ্ছে পাকিস্তান। টেস্ট ইতিহাসে এখন অবধি ৫০০ রান তাড়া করে জয়ের কোনো ইতিহাস নেই। সেই অবিশ্বাস্য ইতিহাসই গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এখন বাবর আজম।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, করাচি টেস্ট জেতাতে পারলে বাবর নিজের নামটা সর্বকালের সেরাদের পাশে লিখিয়ে ফেলবেন। তবে এরই মধ্যে বাবর আজ একটা ছোট্ট তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেও সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন।
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ভুরি ভুরি খেলোয়াড়ের সেঞ্চুরি আছে। কিন্তু এই সেঞ্চুরি করার ভেতর দিয়ে বাবর তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন।
বাবর অধিনায়ক হলে তার ব্যাটে মরীচা পড়ে যেতে পারে, এমন একটা শঙ্কা ছিলোই। কিন্তু এখন অবধি পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানী এই অধিনায়ক দারুণ সামলাচ্ছেন ব্যাপারটা। দলের ও নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছেন।
সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাবর এই নিয়ে ৫৯টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করছেন। এই সময়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৭.১৪। ক্যারিয়ার গড় সামান্য একটু বেশি – ৪৯.৪১।
বাবর আজম পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই ফিফটি করেছিলেন। প্রথম দশ ম্যাচে তার ৫টি ফিফটি ছিলো। দশম ম্যাচে এসে ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান। এরপর ওয়ানডেতে আরও সেঞ্চুরি করেছেন। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়নে টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি পান। এরপর আজ টেস্টেও পেলেন।
এর ফলে বাবর পুরুষদের ক্রিকেটে মাত্র তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসিস ও শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশানের আছে এই কীর্তি। এ ছাড়া মেয়েদের ক্রিকেটে হিদার নাইটের এই কীর্তি আছে।
বাবর এইবার সেঞ্চুরিটাকে আরেকটু বড় করে এগিয়ে যেতে পারলে পাকিস্তান অবিশ্বাস্য একটা জয় পাবে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে দুই টেস্টেই পাকিস্তান মূলত ড্র করে ফেলার মানসিকতা নিয়ে উইকেট বানিয়েছিলো ও সেভাবে খেলছিলো। দ্বিতীয় টেস্টে এসে পাকিস্তানী ব্যাটিং সেই উইকেটেও অস্ট্রেলিয় পেসারদের সামলাতে পারেনি। ফলে অস্ট্রেলিয়া ৫০৬ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তানের সামনে।
জবাবে ২১ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। আর এখানেই আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে বিরাট একটা জুটি করে ফেলেন বাবর। আজ দিনের খেলা শেষ হওয়া অবধি পাকিস্তান ২ উইকেটে ১৯২ রান তুলে ফেলেছে। জয়ের জন্য তাদের আর দরকার ৩১৪ রান।
হাতে ৮ উইকেট নিয়ে শেষ দিনে এই রান তোলাটা খুব অবিশ্বাস্য নয়। অন্তত উইকেট পক্ষেই আছে। এখন দেখার বিষয় বাবর মহানায়ক হতে পারেন কি না। সেটা হলে অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হলে নতুন আরেক পালক যোগ হবে বাদশাহ বাবরের মুকুটে।