বাঘই যখন ভয়ে

যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়- প্রবাদটি বোধহয় খুব কম বাঙালিই শোনেনি। আর সেই বাঘ যদি হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার তাহলে কে না ভয় পাবে বলুন। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটের বাঘদের সাথে ঘটেছে একেবারেই উল্টোটা। এখানে বরং টাইগারই ছিল ভয়ে ভয়ে। আর অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে সেই ভয়টাই সত্যি হলো।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি ভয়ে ছিল দুটি জিনিস নিয়ে। একটি হচ্ছে অ্যান্টিগার কন্ডিশনে ডিউক বলের স্যুইং আরেকটি হচ্ছে ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ। তবে স্বস্তি ছিল যে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ছিলেন না আতঙ্কের এই পেসার।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সস্তিটা থাকলো না। একেবারে শেষ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজে দলে যোগ হন কেমার রোচ। ম্যাচের একেবারে শুরুতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের লেজটা টেনে ধরেন এই পেসার। ইনিংসের একেবারে প্রথম ওভারেই ফেরান বাংলাদেশের ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে। এরপর তাঁর বলেই ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্তও।

এরপর আর কেউই আসলে ওই কন্ডিশনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তামিম ইকবাল খানিকটা চেষ্টা করেছিলেন বটে। তবে তিনিও ফিরে গিয়েছেন ৪৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলেই।

ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা আরেকবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পজিশন তিন ও চার নাম্বার থেকে কেউই রান পাচ্ছেন না।

নাজমুল হোসেন শান্ত অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আসলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনভাবেই তা মেলে ধরতে পারছেন না। ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে খেলেও দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে তিনি যেমন আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন আবার বাংলাদেশ দলকেও ভীষণ ভুগতে হচ্ছে।

অন্যদিকে সদ্য বিদায়ি টেস্ট অধিনায়ক রানে ফিরতে পারলেন না আজও। ব্যাট হাতে রান পাচ্ছিলেন না বলেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাড়ালেন। নিজের ব্যাটিংটা ফিরে পেতেই মুমিনুল হকের এমন সিদ্ধান্ত। তবে অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে রানের দেখাই পেলেন না মুমিনুল হক। এভাবে চলতে থাকলে সাকিবের টেস্ট দলে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

ওদিকে আরেক সম্ভাবনাময় ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও মেরেছেন গোল্ডেন ডাক। টেস্ট ক্রিকেটে এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারটা খুব বেশি বড় না। তবে ইতোমধ্যেই পাঁচটি ডাক আছে তাঁর ঝুলিতে। আবার টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দারুণ ইনিংসও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু ইনিংসের শুরুতেই জয়ের জড়তাটা কাটছেনা। ফলে এই ওপেনারকে নিয়ে দ্রুতই কাজ করা প্রয়োজন।

এছাড়া আজ ব্যাট হাতে খুব বেশি রান করতে পারেননি লিটন দাসও। ফলে বাংলাদেশের আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি। মিরাজ, সোহানরাও নিজেদের উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। যদিও শেষ দিকে সাকিব খানিকটা চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁকে সঙ্গ দেয়ার মত কী ছিল না।

তবুও আট উইকেট পড়ে যাবার পর সাকিব দ্রুত কিছু রান করার চেষ্টা করেছেন। এই সাহসটাই আসলে সাকিবকে আর দশটা ক্রিকেটারের থেকে আলাদা করে। এবাদতকে একপ্রান্তে রেখে তিনি যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সামলেছেন সেটাই বুঝিয়ে দেয় ক্রিকেটার আর গ্রেট ক্রিকেটারের পার্থক্য। তিনি জানেন উইকেটে পড়ে থাকার মত সঙ্গী আর পাবেন না। সেজন্যই দ্রুত কিছু রান যোগ করে দিয়ে গেলেন। উপরের ব্যাটসম্যানদের এমন ব্যর্থতার পরেও তিনি কী সাবলীল। লেট কাট, পুল, নিজের কাছে স্ট্রাইক রাখা, শেষ পর্যন্ত ডমিনেট করার মানসিকতা।

শেষ পর্যন্ত সাকিব ফিরে গিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ৫০ রান করে। তাঁর এই ইনিংসে ভর করেই ছয়টি ডাকের পরেও একশো রান পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে দুই সেশনও ব্যাট করতে না পারা বাংলাদেশ থেমেছে মাত্র ১০৩ রানেই।

 

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link