ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সফরটা ভুলে যাবার মতই ছিল। টেস্ট, টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই সিরিজ হারতে হয়েছে টাইগারদের। তবে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে খেলা ফিরতেই আবার জ্বলে উঠেছে তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে টালমাটাল ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন আপ। বৃষ্টি ভেজা উইকেটে শুরুটা করে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ। এরপর সেটাকে ধরে এগিয়ে গিয়েছেন শরিফুল, মিরাজরা।
ওদিকে ওয়ানডে ফরম্যাটে আজই অভিষেক হলো নাসুম আহমেদের। তবুও তামিম ইকবাল ভরসা রেখেছেন এই স্পিনারের উপর। ঠিকই উইকেটের সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ একটা শুরু এনে দিয়েছেন নাসুম। শামার ব্রুকসের বিতর্কিত সেই রিভিউটা না হলে হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম উইকেটটাও পেয়ে যেতেন নিজের দ্বিতীয় ওভারেই।
উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ক্যারবীয় ব্যাটারদের চেপে ধরেছিলেন নাসুম। আট ওভার বোলিং করে খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। এতে অন্য বোলারদের জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। আর ইনিংসের প্রথম বলটা নাসুমের হাতে তুলে দেয়ায় তামিমের প্রশংসাও করতে হয়। এছাড়া পুরো ম্যাচেই তামিমের অধিনায়কত্ব ছিল আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক।
এছাড়া ম্যাচের শুরুতেই নাসুমের ওভারে রিভিউ নিয়ে বিতর্কের তৈরি হয়। অন ফিল্ড আম্পায়ার আউট দিলেও পরে টিভি আম্পায়ার সেটা নট আউট ঘোষণা করেন। নিয়ম আছে মূল আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করতে হলে থার্ড আম্পায়ারকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু ব্যাট আর প্যাডের কারণে হওয়া স্পাইক দেখেই আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন টিভি আম্পায়ার নাইজেল ডুগিড। আর সেজন্যই বিতর্কটা আরো বেশি।
ফলে বাংলাদেশ একটা উইকেট বঞ্চিত হলো কিনা সেই প্রশ্ন করাই যায়। আর স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা মানতে পারেননি তামিম ইকবাল। দুই অন-ফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গেই বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ওদিকে ডুগিডের কারণে বেচে যাওয়া শামার ব্রুকসকে পরে কট বিহাইন্ড করে ফেরান পেসার শরিফুল ইসলাম। ৬৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন এই ব্যাটার।
এরপর সঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট গুলো এনে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বরাবরের মতই এই ম্যাচেও বাংলাদেশের স্পিন বোলিং আক্রমণের প্রানভমরা ছিলেন মিরাজ। আর সাকিবের অনুপস্থিতি একেবারেই বুঝতে দেননি তিনি। ৩৬ রান দিয়ে মিরাজ তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া শরিফুল ইসলামও তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। পুরো বোলিং লাইন আপের এমন বোলিংয়ে মাত্র ১৪৯ রানেই থেমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
ওদিকে জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেন তামিম ইকবাল। ব্যাটিং করছিলেন ১৩৩ স্ট্রাইকরেটে। তবে হঠাতই রান আউট হয়ে ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্যাভিলিয়নের ফেরা আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস। লিটন, তামিম আউট হবার পর বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও ৪৬ বলে ৩৭ রানের ইনিংসটাকে আর বড় করতে পারেননি তিনি।
যদিও ১৫০ রানের ছোট টার্গেট বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের সামনে। বাকিটা সময় কোন উইকেট না হারিয়েই ম্যাচ শেষ করে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহান। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৬ উইকেটের সহজ জয়ই পেল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে ফিরতেই যেন আবার চেনা ছন্দ ফিরে পেল বাংলাদেশ। ফলে ঈদের রাতে জেগে থাকা দর্শকদের হতাশ করেনি তামিমের দল।