পাকিস্তানের মাটিতে দশ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। বিরল, বিস্ময় জাগানিয়া এক রেকর্ড! এর আগে কেউ কখনো পাকিস্তানের মাটিতে দশ উইকেটের জয় পায়নি। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তর দল সেটাই করে দেখিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয়ও তুলে নিয়েছে টাইগাররা। ২০০৩ সালের মুলতানের আক্ষেপ ঘুচিয়েছে রাওয়ালপিন্ডিতে।
বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ জিতবে তাও আবার বিদেশের মাটিতে, সেটা যেন বরাবরই ছিল অভাবনীয়। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের পর থেকেই যেন বাংলাদেশ নিজেদের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ের দলের উপর দিয়ে গেছে বহু ঝড়ঝাপ্টা। তবুও বনেদী ফরম্যাটে বহুল প্রতিক্ষিত একটা জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেট কোনভাবেই একদিনের খেলা নয়। ১৫টি সেশন ধরে অধ্যাবসায় চালিয়ে যেতে হয়। তার থেকেও বেশি প্রয়োজন হয় পরিকল্পনার। স্বাগতিকদের পরিকল্পনার ঘাটতি পুরোপুরি উঠিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩ সেশন খেলা হয়েছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের। এর মধ্যে দুইটি সেশন বাদে বাকি ১১টি সেশনেই বাংলাদেশ ছিল চালকের আসনে।
তবে বাংলাদেশকে সে মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিল টস জয়। টসে জিতে পেসারদের জন্য আদর্শ কন্ডিশনে বল করবার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সেই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলামরা প্রথম দিনের প্রথম সেশন নিজেদের করে নেয়। এরপর অবশ্য প্রথম দিনের শেষ সেশন ও দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে আধিপত্য বিস্তার করেছিল পাকিস্তানের ব্যাটাররা।
সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে ভর করে বিশাল সংগ্রহের পথে এগিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বড্ড ভুগিয়েছে তাদের। মাত্র ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক শান মাসুদ। পেসারদের উপর ভরসা করে কোন ফ্রন্টলাইন স্পিনার নেয়নি পাকিস্তান। সে সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে স্বাগতিকদের।
সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, লিটন দাস ও মেহেদী মিরাজের অর্ধ-শতকের সাথে মুশফিকের প্রায় দ্বি-শতক রানের ইনিংসের কল্যাণে ১১৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের শেষবেলায় ব্যাটিং করতে নামে পাকিস্তান। সেই সময়েও স্বস্তি দেননি শরিফুল ইসলামরা। টানা দুই দিন ফিল্ডিংয়ে ক্লান্ত পাকিস্তানি ব্যাটারদের দুর্দান্ত লাইন আর লেন্থে কাবু করেছেন টাইগার পেসাররা।
পঞ্চম দিনের সকাল থেকেই চারিদিকে জয়ের সুবাতাস বইতে শুরু করে। সে বাতাসের সূচনা হয় হাসান মাহমুদ শান মাসুদকে ফেরানোর সাথে সাথে। এরপর নাহিদ রানা বাবর আজমকে আউট করার পরই বাংলাদেশ জয়ের অন্বেষণ শুরু করে। আর সেই অন্বেষণের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান।
এই দুইজনে মিলে পাকিস্তানে সাতটি উইকেট নিজেদের করে নেন। তাতে করে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের জন্য জয়ের লক্ষ্য ঠিক হয় মাত্র ৩০ রান। বাংলাদেশের দুইজন ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম কোনরকমের ভুল করেননি ৩০ রান সংগ্রহের পথে।
শেষ অবধি রাওয়ালপিন্ডির রোদ ঝলমলে দিনে ১০ উইকেটের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। তাতে করে বিদেশের মাটিতে নিজেদের সপ্তম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সঠিক পরিকল্পনা আর দূরদর্শিতা বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে দারুণ জয়। ইতিহাসের পাতায় বহুকাল সজীব রবে রেকর্ড গড়া এই জয়।