শক্ত করে বালু ধরতে গিয়ে, শূন্য হাত বাংলাদেশের!

বাংলাদেশ দল প্ল্যান বাস্তবায়নের সঠিক সময় নির্ধারণে ভুল করে ফেলে বারংবার- সে কারণেই সম্ভবত হাতে থাকা ম্যাচগুলোর ফলাফল প্রতিপক্ষের হাতে শোভা পায়।

বাংলাদেশকে সম্ভবত একটু বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেয়ে বসেছিল। ম্যাচের লাগাম ছুটে যেতে দেখেও পরিকল্পনায় বদল নিয়ে আসবে যেকোন দল। কিন্তু তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনের শেষভাগ ছাড়া বাংলাদেশ দল নিজেদের পূর্ব পরিকল্পিত ছকেই অনঢ় থেকেছে। তাতে করে ম্যাচের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে অতিরিক্ত চাপে ফসকে বেড়িয়ে গেছে বালুর মত করে।

দুইদিন ব্যাটিং করে ৪৯৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ দল নিজেদের স্কোরবোর্ডে। এ জন্যে তাদের খেলতে হয়েছে প্রায় ১৫৪ ওভার। অন্যদিকে স্রেফ ৯৩ ওভারের মধ্যে ৩৬৮ রান করে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। আর এই রানটুকু তারা তুলেছে টেস্টের তৃতীয় দিনে। অতএব উইকেট যে তৃতীয় দিনেও যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক ছিল তা তো দিনের আলোর মতই স্পষ্ট।

এই বিষয়টি অন্তত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বোঝার কথা ছিল প্রথম ঘন্টাতেই। দ্বিতীয় দিনের শেষবেলাতে কোচ সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে খানিকটা রহস্য সৃষ্টি করে বলেছিলেন, ‘দেখুন পরিকল্পনার কথা তো আমি আপনাদের বলতে পারব না, যে কি পরিকল্পনা করব না করব। তবে একটা টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্যে যেরকম পরিকল্পনা করা দরকার, আমরা সেভাবেই আগাচ্ছি।’

বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল- লঙ্কান ব্যাটারদের প্রলুব্ধ করা, নতুন বলে কিছু উইকেট তুলে নেওয়া।  সে কাজে বাংলাদেশ খুব একটা সফলতা যে পায়নি, সেটা তো স্কোরবোর্ডে থাকা চারটি উইকেটই বলে দিচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে মুমিনুল হক ওভার করতে আসার আগে অবধি বাংলাদেশকে রক্ষণাত্মক কোন ফিল্ড সেটআপ করতে দেখা যায়নি।

পুরোটা সময় জুড়ে উইকেটের সন্ধান করতে গিয়ে রান গলে পড়েছে বোলারদের হাত থেকে। সেই সাথে অল্প অল্প করে হাত থেকে ছুটেছে ম্যাচ। রানের চাপটা বেশ খানিকটা কমিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বাংলাদেশের চাইতে প্রবল। কারণ তাদের আর স্রেফ ১২৭ রান প্রয়োজন, বাংলাদেশের সমান হতে।

উইকেটে এখনও বোলারদের জন্যে তেমন কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। নিখাঁদ ব্যাটিং উইকেট। এমন উইকেটে ১২৭ রান কমিয়ে ফেলতে পারলে শ্রীলঙ্কার জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত হয়ে যাবে। অথচ তাদের রানের চাকা ঘন্টাখানেকের জন্যে আটকে রাখতে পারলে দৃশ্যপট ভিন্ন হলেও হতে পারত। চাপের মুখে বাংলাদেশ উইকেটও পেয়ে যেতে পারত আরও বেশ কয়েকটি। তাছাড়া উইকেট তো একটা না একটা পর্যায়ে সহয়তা করত বোলারদের। টেস্ট ম্যাচে তো ধৈর্য সবক্ষেত্রেই চাই।

এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পরিকল্পনার পরিবর্তনই ছিল বাংলাদেশের সামনে উদাহরণ হিসেবে। বাংলাদেশের রান করার সুযোগ কমিয়ে দিতে চেয়েছে স্বাগতিকরা, সে কথা তো মুশফিকুর রহিমই জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁরা (শ্রীলঙ্কান) ফিল্ড প্লেসমেন্ট ওভাবেই করে, কন্ডিশনের ভিত্তিতে।’

পুরো বিশ্ব জুড়েই বরং প্ল্যান ‘এ’ ও প্ল্যান ‘বি’ কোন কোন ক্ষেত্রে ‘প্ল্যান সি’ নিয়ে মাঠে নামে দলগুলো। পরিস্থিতি, কন্ডিশন অনুযায়ী বদল আনে নিজেদের পরিকল্পনায়। কিন্তু বাংলাদেশ দল প্ল্যান বাস্তবায়নের সঠিক সময় নির্ধারণে ভুল করে ফেলে বারংবার- সে কারণেই সম্ভবত হাতে থাকা ম্যাচগুলোর ফলাফল প্রতিপক্ষের হাতে শোভা পায়।

Share via
Copy link