মিশন ২০২৩ বিশ্বকাপ। হাতে আছে মাত্র মাস ছয়েক সময়। বলা হচ্ছে, এটাই নাকি বাংলাদেশের সেরা সুযোগ। আসলে কাগজে কলমে কোথায় অবস্থান বাংলাদেশের? বাংলাদেশ কি পারবে বাঘা বাঘা দলগুলোর সাথে লড়াই করতে?
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। সে আসরে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় পরাক্রমশালী দল পাকিস্তানকে। এরপর দীর্ঘ ২৪ বছরে ৬ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে টিম টাইগার। ওয়ানডে বিশ্বকাপে যদি বড় অর্জন বলতে হয় তাহলে সবাই ২০১৫ সালে কোয়াটারে যাওয়ার সুখ স্মৃতিকেই স্মরণ করবে। এর বাহিরে তেমন কিছু নেই আমাদের বিশ্বকাপে। ২০১৯ অভিজ্ঞ দল নিয়েও কিছুই করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে, মনে রাখার মত পারফর্ম করেছেন কেবল সাকিব আল হাসান।
এবার বাংলাদেশ কতদূর যাবে? বাস্তবধর্মী স্বপ্ন হল – সেমিফাইনাল। তবে, সেটাকে একটু বাড়িয়ে ফাইনাল করা যায়। তবে, সেমিফাইনালের নিচে যে কোনো কিছুই ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে।
সেই আশার পালে হাওয়া দিয়েছে সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড ও আইয়ারল্যান্ড সিরিজের বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। স্পিন নির্ভর দল থেকে বাংলাদেশ দল এখন পেস আক্রমণে আস্থা রাখা শুরু করেছে। কিংবদন্তি কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ছোয়ায় পেস ইউনিট আগের চাইতে ভয়ঙ্কর রূপে মাঠে নামছে। মিরপুরের স্পিন নির্ভর পিচেও বাংলাদেশি পেসারদের খুঁজে পাওয়া গেছে। দলে ভরসার এক অন্য নাম হয়ে উঠেছেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ কিংবা এবাদত হোসেনরা। সাথে মুস্তাফিজুর রহমান তো আছেন।
বিশ্বকাপ মানেই রান চাইবে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। সেক্ষেত্রে উইকেট হবে স্পোর্টিং। যেখানে বোলারদের জন্যও কিছু থাকবে আশা করা যায়। পেসাররা দারুণ ছন্দে আছেন নি:সন্দেহে। এখন বৈচিত্রের সাথে সাথে টানা ম্যাচের ধকল সামলে ফিটনেস ঠিক রাখাও এখন জরুরি। স্পিন নিয়ে ভাবনার জায়গাও তেমন নেই। কারণ দলে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সাথে স্পিন বিভাগ সামলাবেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। তবে, লেগ স্পিনারের একটা ঘাটতি থাকছেই। আর কোয়ালিটি লেগ স্পিনার দেশেই তেমন নেই বলে ব্যাটাররাও এই জায়গায় ভুগে থাকেন।
স্পোর্টিং উইকেট যেহেতু হবে সেক্ষেত্রে ব্যাটারদের ভুমিকাটাই সবচেয়ে বেশি হবে। ব্যাটিং করে ভালো একটা স্কোর জমা করতে না পারলে, বোলারদের কিছু করার থাকবে না। ওপেনিং জুটি একটা ভালো সূচনা দিতে পাড়লে আমাদের বর্তমান মিডেল অর্ডার ভাল কিছু দিতে সদা প্রস্তুত। তামিম ইকবাল কিছুটা নড়বড়ে লাগছে , ফিটনেস ও ফর্ম নিয়ে তাঁর আরও কাজ করা দরকার। লিটন দাস রানে থাকা মানে বাংলাদেশ দলের জন্য স্বস্তির।
সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের জায়গাগুলো চূড়ান্তই বলা চলে। নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকুর রহিমরা আছেন নিজেদের সেরা ফর্মে। সাকিব ও মুশফিকের জায়গা পরিবর্তন হলেও তাঁরা দারুণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। এবার কেবল নিজেদের দায়িত্ব ও পরিস্থিতি বুঝে সেরাটা দিতে হবে।
চান্দিকা হাতুরুসিংহে আসার সাথে সাথে দলের ফিল্ডিং পেয়েছে নতুন প্রাণ। দারুণ ফিল্ডিং দলের মনোবল বাড়ায়। হাফ চান্স কাজে লাগাতে পারলে বোলাররাও চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের ঝিমিয়ে পড়া ফিল্ডিং এখন অনেক আগ্রাসী।
আর সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে ট্যাকটিশিয়ান হাতুুরুসিংহের দিকে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনি নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন। এবারও তিনিই কাণ্ডারি। দলের সাথে সাথে এখন হাতুরু নিজেও অনেক পরিপক্ক। আর তিনি আসার পর দলের ভেতরকার জড়তাও কেটে গেছে অনেকটাই এবার। এবার মাঠের সাফল্যের পালা।
শক্তি মত্তার দিক থেকে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও নিজেদের দিনে বাংলাদেশের সক্ষমতা কারোই অজানা নয়। বিশ্বকাপে এবার তারই মঞ্চায়ন হোক।