স্বল্প প্রাপ্তি আর হাজারটা আক্ষেপ

বছরটা প্রায় শেষের দিকে। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। এরপর আরও একটি নতুন বছরের দিকে ধাবিত হবে গোটা বিশ্ব। ক্রীড়াঙ্গনের সব হিসেব-নিকেশও নতুন করে শুরু হবে। পেছনের সব ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে প্রতিটি দলই চাইবে নিজেদেরকে আরেকটু গুছিয়ে নিতে। সেদিক থেকে পিছিয়ে নিশ্চয়ই থাকবে না ক্রিকেট খেলুড়ে দলগুলো। প্রতিটা দলই নিজেদের সক্ষমতা আর দাপটে অভিপ্রায় ঘটাতে চাইবে নিশ্চিতভাবেই তা বলে দেওয়া যায়। বাংলাদেশও নিশ্চয়ই সে পরিকল্পনাই করছে।

২০২২ বছরটা অবিস্মরণীয় হয়ে রয়ে যাবে কাতার বিশ্বকাপের জন্য। বছরের শেষ ভাগে পুরো পৃথিবীকে আনন্দে ভাসিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে বছর জুড়েই মাঠে গড়িয়েছে ক্রিকেট। এমনকি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্ব আয়োজনও হয়ে গেছে এ বছর। ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য দারুণ এক বছর কেটেছে তা বলতেই হচ্ছে। তবে কোথাও একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই উদিত হয়। ঠিক কেমন গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ২০২২?

বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ ও দারুণ ক্রিকেটের উপহার দিয়েছে টাইগাররা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে একটা বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত, আর সেটা হচ্ছে রোমাঞ্চ। বছর জুড়ে দারুণসব ম্যাচের সাক্ষী হয়েছে টাইগার ক্রিকেট ভক্তরা। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের কমতি ঘটেনি। সেটা অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি। তবুও সেই ২০১৫ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের একটা মৃদু দাপট চলমান। তার ব্যত্যয় ঘটেনি ২০২২ এ এসেও। এই বছরেও পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল টাইগার ক্রিকেট।

এই বছর ওয়ানডেতে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি সিরিজ হেরেছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের মাটিতে বহুদিনের জয়রথের পরিসমাপ্তি ঘটে। এছাড়া বাকি চারটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে প্রতিপক্ষ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মত প্রথম সারির দলগুলোও ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা সিরিজটা হতে পারে এই বছরের সবচেয়ে বড় হাইলাইট। কারণ প্রোটিয়াদের মাটিতে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। দুর্ভেদ্য প্রোটিয়া দূর্গের পতন ঘটাতে অবশেষে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাঠে হোয়াইট ওয়াশ করাটাও বেশ চমকপ্রদ এক বিষয়। যদিও ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা যাচ্ছেতাই। তবে মিরপুর টাইগার ক্রিকেটের অলিখিত দূর্গ। এখান থেকে সিরিজ বাগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় দুষ্কর। সেটা খুব ভালভাবেই টের পেয়েছে পূর্ণ শক্তির ভারত দল। বছরের একেবারে শেষটা রাঙিয়ে রাখল বাংলাদেশ। এই তো গেল একটি সংস্করণের যত সাফল্য। তবে বাকি দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশ বরাবরের মতই হতাশ করেছে তার দর্শকদের।

টেস্টে বাংলাদেশ কেবল একটি ম্যাচই জিতেছে। তবে সেটিও এক অবিস্মরণীয় এক জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইতে সে জয়টি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা জয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল আরাধ্য। প্রতিটা সেশনে বাংলাদেশ দাপটের সাথে খেলেই জয় আদায় করে নিয়েছিল। সেটা আবার ছিল বছরের একেবারে শুরুতে। এরপর আর সাদা পোশাকে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেবল একটি টেস্ট বাংলাদেশ ড্র করতে সক্ষম হয়।

টি-টোয়েন্টিতেও সাফল্যের চিত্রটা কেবলই এক মরীচিকা। তবে এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ দুইটি জয় পেয়েছে। তবুও এই ইতিহাস কেবলই এক ভ্রান্ত চিত্রের অবতারণা। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে যাবার। সেই সুযোগটি বাংলাদেশ হেলায় হারিয়েছে যথারীতি। এছাড়া ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে বাংলাদেশের বলার মত তেমন কোন সাফল্যই নেই এই গোটা বছর জুড়ে।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিন্তাভাবনায় বেশ পরিবর্তন লক্ষনীয়। টেস্টের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বও পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে আন্ডার পারফর্মারদের ছেঁটে ফেলাটাও বেশ ইতিবাচক। পরিবর্তনের প্রচেষ্টা লক্ষ্যনীয়। এছাড়া ভিন্ন ফরম্যাটের জন্য বিশেষজ্ঞ কোচদের নিয়োগটাও চোখে পড়ার মত। পরিবর্তনের এই বাতাসটা চলমান থাকলে প্রত্যাশা করাই যায় আসছে বছর, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্য়ের গল্প বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link