বাংলাদেশ ক্রিকেট অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিপাকে প্রবেশ করে ফেলেছে। অনিশ্চয়তার ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের গুটিকতক বিষয় ছিল একেবারে সুনির্দিষ্ট। এই যেমন একাদশ। তবে এখন সম্ভবত সেই নির্দিষ্ট বিষয়টিতে পরিবর্তন আসতে চলেছে। কেননা সাইডবেঞ্চে যারা বসে থাকেন, তারা প্রত্যেকেই যে পারফরমেন্সের সেই ক্ষুধাটা লালন করেন।
এই যেমন ধরুণ রিশাদ হোসেনের কথা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে অবহেলিত নাম রিশাদ। তাও যে চান্ডিকা হাতুরুসিংহের বেজায় জোরাজুরিতে তিনি এখন অবধি জাতীয় দলের রাডারের মধ্যেই ছিলেন। তবে এই যে সাইড বেঞ্চে থেকে থেকে, ক্ষুধা বেড়েছে তার, সে বিষয়টা নিশ্চিতরুপেই ভীষণ ইতিবাচক।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে রিশাদ ছিলেন না একাদশে। অভিজ্ঞ তকমার জোরে তাইজুল ইসলাম খেলেছেন একজন স্পিনার হিসেবে। অথচ এই চট্টগ্রামের উইকেটেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সুচারুরুপে ব্যবহার করেছিলেন রিশাদকে। সে বিষয়টি নিশ্চয়ই রিশাদ ভুলে যাননি। তাইতো অপেক্ষা ছিলেন। অপেক্ষা তাকে তাঁতিয়ে তুলেছিল।
তারপর রিশাদ একাদশে সুযোগ পেলেন। তাইজুলের স্থানে এসে বনে গেলেন রীতিমত ম্যাচ জয়ের কারিগর। দুর্ধর্ষ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে মাত্র ৪০ ওভারের মাঝেই শেষ করলেন রান তাড়া। বল হাতেও প্রথম বলে পেয়েছিলেন উইকেটের দেখা।
রিশাদের মতই বেঞ্চ থেকে উঠে এসে দারুণ পারফরমেন্স করে দেখালেন তানজিদ হাসান তামিমও। একাদশে ছিলেন না, প্রথম ইনিংসের শেষের দিকে তিনি জানতে পারলেন ব্যাট করতে হবে। অগ্যতা নামলেন তিনি। বাউন্ডারির পসরা সাজিয়ে দলের জয়ের ভীতটা গড়ে দিলেন তিনি। অথচ আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল এনামুল হক বিজয়ের। তবুও তিনি হয়েছেন দারুণভাবে ব্যর্থ।
তাছাড়া একাদশের বাইরে থেকে সিরিজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। ইকোনমিকাল বোলিং, সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট শিকার- চিরায়ত মুস্তাফিজ হয়েই ধরা দেন তিনি। সাগরিকার প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে কষ্ট হয়েছিল। পেশিতে টান লেগে স্ট্রেচারে করে ছেড়েছিলেন মাঠ। তবে পারফরমেন্সের ক্ষুধা মিটিয়েছেন তার আগেই।
এই যে একাদশের বাইরে থেকে এসে পারফরম করা। নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ জানানো- এই বিষয়গুলো ভীষণ ইতিবাচক। কেননা তাতে করে সতীর্থদের মধ্যে বাড়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা। একাদশে সুযোগ পাওয়ার জন্যে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাগিদ বাড়ে। সতীর্থদের একটু ভুল, সামান্য অসুস্থতার সুযোগ কাজে লাগানোর স্পৃহা বাড়ে।
তাতে করে আখেরে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই লাভ। কেননা খেলোয়াড়রা প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাপিয়ে নতুন করে গড়বেন। সে প্রক্রিয়ায় একটা সময় বিশ্বমানের হয়ে উঠবেন প্রত্যেকে। তখন দলটায় পারফরমেন্সের ক্ষুধাও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। প্রতিটা খেলোয়াড়ই নিজের দিনে নিজেকে উজাড় করে দিতে মুখিয়ে থাকবেন। ঠিক যেমনটা ঘটে ভারতীয় ক্রিকেটে।