স্টিভ ওয়াহ থেকে মাইকেল ক্লার্ক। কিংবা বিরাট কোহলি থেকে এই আজিঙ্কা রাহানে।
এদের ইতিহাসটা একটু খতিয়ে দেখুন। কিভাবে অধিনায়কত্বর ব্যাটনটা হাতে পেয়েছেন তারা? উত্তরটা সোজা লম্বা সময় ধরে তারা কোনো অধিনায়কের সাথে ছিলেন। সেখানে কাছ থেকে অধিনায়কত্ব দেখেছেন, শিখেছেন এবং এক সময় এসে নিজেই সেই দায়িত্বটা নিয়েছেন।
ক্রিকেট দলে সহ অধিনায়ককে বলা যায় তাই উত্তরসুরী বা ভবিষ্যত অধিনায়ক। এ কারণেই সব ফরম্যাটে সহঅধিনায়ক পদে রেখে কাউকে তৈরী করা হয়। অথচ কী বিষ্ময়কর দেখুন, আজকাল বাংলাদেশ দলের কোনো ফরম্যাটেই কোনো নির্দিষ্ট সহ অধিনায়ক নেই।
অথচ এই আমরা ক দিন পরপর হায় হুতাশ করি যে, আমাদের ভবিষ্যত অধিনায়ক তৈরী হয় না!
আজই এই সহঅধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা উঠেছিলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান তাতে বলেছেন, ঘরের মাটিতে খেলা বলে সহঅধিনায়ক নির্বাচনে তারা কোনো ব্যস্ততার কারণ দেখেন না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তামিম ইকবালের কোনো ডেপুটি নেই কেনো, এই প্রশ্ন উঠেছিলো। জবাবে আকরাম খান বলেছেন, ‘যেহেতু আমরা ঘরের মাঠে খেলছি সেহেতু আমাদের কোনো….। পরিস্থিতি ওরকম হলেই আমরা নাম উল্লেখ করব। দেশেই খেলা হওয়াতে আমরা এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছি না। আমরা থাকব, বোর্ড পরিচালকেরা থাকবে। তো যে কোনো সময় আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমাদের কিছু সিনিয়র প্লেয়ার আছে, কিছু জুনিয়র প্লেয়ার আছে। তো এটা নিয়ে কোনরকম সমস্যা হবে না। আল্লাহ না করুক যদি এরকম কিছু হয় তাহলে সিনিয়র প্লেয়াররা তো আছেই। (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ আছে, সাকিব আছে। অভিজ্ঞ এমন আরো আছে, মুশফিক আছে।’
মানে, বিসিবি ধরেই নিয়েছে যে, ক্রিকেট খেলায় সহঅধিনায়কের কাজ কেবল অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে খানিকটা সময় দল সামলানো, ফিল্ডিং সাজানো! অধিনায়কের পেটের পীড়া না হলে সহঅধিনায়কের দরকারই নেই!
আজব সব চিন্তাভাবনা।
অথচ সহঅধিনায়কের ভূমিকাটা এর চেয়ে অনেক ব্যপ্ত এবং বিশাল। একজন সহঅধিনায়ক হলেন মাঠে সার্বক্ষনিক অধিনায়কের ‘সেকেন্ড থট’। অধিনায়ক প্রতিটা গুরুত্বপূর্ন মুহুর্তে সহঅধিনায়কের কাছ থেকে ইনপুট নেবেন। হ্যা, দলে সিনিয়রদের বা জুনিয়রদের একটা কোর গ্রুপ থাকবে। জরুরী সময়ে সবাই আলাপ করবেন। কিন্তু প্রতিটা সময় অধিনায়ককে বিকল্প চিন্তা দিয়ে সহায়তা করবেন সহঅধিনায়ক।
মজার ব্যাপার হলো, বিখ্যাত অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়করা মাঠে ফিল্ডিংটা পর্যন্ত কাছাকাছি করেন। যাতে প্রতিটা বলে তারা আলাপ করে নিতে পারেন। এটা ক্রিকেটের অন্যতম সুন্দর ব্যাপারগুলোর একটা। এখানে খেলাটা একটা মস্তিষ্ক চর্চার ভেতর দিয়ে হয়।
কিন্তু আমরা এই সহঅধিনায়কের ভূমিকাকে স্রেফ ‘স্ট্যান্ড ইন’ একটা কাজ ভেবে ইদানিং এই নামটা ঘোষনার রেওয়াজ থেকেই সরে এসেছি। যতদূর মনে করতে পারি, ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে কোনো সহঅধিনায়ক নেই। সাকিব আল হাসানের জামানা থেকে টেস্টে নেই কোনো সহঅধিনায়ক; মুমিনুলের ক্ষেত্রে কখনোই কারো নাম ঘোষনা করা হয়নি। টি-টোয়েন্টিতেও রিয়াদের কোনো ডেপুটি নেই।
সহঅধিনায়ক মাঠে অধিনায়কের জন্য বিরাট একটা আশ্রয়, এটা দারুণ সত্যি। সেই সাথে আরেকটা সত্যি হলো সহঅধিনায়ক হলেন অনেকটাই ভবিষ্যত অধিনায়ক; যেমনটা আমরা শুরুতে বললাম। অনেকে দেশেই রেওয়াজ হলো, নেক্সট লিডার বলে যাকে ভাবা হচ্ছে, তাকে সহঅধিনায়ক করা। যেমন বিরাট কোহলি ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির ডেপুটি বা রিকি পন্টিং ছিলেন স্টিভ ওয়াহর ডেপুটি। স্টিভ নিজে মার্ক টেলরের ডেপুটি ছিলেন।
ফলে এই উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরীর জন্যও সহ-অধিনায়ক রাখাটা জরুরী একটা ব্যাপার।
টেস্টে অনায়াসে আপনি নাজমুল হোসেন শান্তকে মুমিনুলের ডেপুটি করতে পারেন। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে লিটন দাসকে দেওয়া যেতে পারে এই দায়িত্ব।
হ্যা, বিশ্ববিখ্যাত অনেক সহঅধিনায়কই নানা কারণে পরে অধিনায়ক হতে পারেননি। শেন ওয়ার্ন কখনো অধিনায়ক হতে পারেননি। অজয় জাদেজাকে নিয়ে ভারতের অনেক পরিকল্পনা ছিলো; তা কাজে লাগেনি। তাই বলে এই জায়গা থেকে সরে তো আসা যাবে না।
একটা ব্যাপার দেখুন। এই যে আমরা বিকেএসপিতে তিনটি অনুশীলন ম্যাচ খেলছি; এখানে একটি একাদশ তামিম ইকবালের একাদশ। আরেকটিকে বলা হচ্ছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। কিন্তু এটা অনায়াসে অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের দুটি দল হতে পারতো। সাধারণত আন্ত:স্কোয়াড লড়াইগুলোতে তাই হয়। ওতে একটা লড়াই হয়, উত্তরসুরীরও কিছু করে দেখানোর দায় তৈরী হয়।
কিন্তু আমরা তো সহঅধিনায়ক কে, তাই জানি না। তাহলে লড়াইটা আর কেমন করে হবে!