এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে একটা রিয়েলিটি চেক প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। সেটাই সম্ভবত দিয়ে গেল আফগানিস্তানের বোলাররা। শুধু বোলার নয়, ব্যাটাররাও বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়ে গেল, বিস্তর ফারাক রয়েছে এখনও বাংলাদেশ আর শিরোপা জয়ের মাঝে।
টেস্ট ক্রিকেটের বিচারে বাংলাদেশের চাইতে ঢের পিছিয়ে আফগানিস্তান। তাইতো ঘরের মাঠের সুবিধাটুকু নিয়ে তাদেরকে হারানো গেছে রেকর্ড ব্যবধানে। তাছাড়া আফগানদের টেস্ট দলের মানও যে বিশ্বমানের ছিল না, তা তো বহুবার, বহুজনে বলার চেষ্টাও করেছে।
বাংলাদেশের যেন তন্দ্রা কাটলো। যেই নেশাতুর তন্দ্রাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল টানা খেলা আয়ারল্যান্ড সিরিজ। অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে, বর্তমান আফগানিস্তান দল আয়ারল্যান্ডের চাইতে বেশ শক্ত দল। তারা ওয়ানডে সুপার লিগের সেরা আট দলের মধ্যে থেকেই নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের টিকিট।
অন্যদিকে, বাছাইপর্ব খেলা আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপে থাকছে না। বরং চমকের সেই বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মত দলকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। অন্তত এই বিষয়গুলো আফগানিস্তানের শক্তি মত্তার পক্ষেই কথা বলে।
বাংলাদেশ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় শিরোপার পানে ছুটছিল। সেটা যে কেবলই এক মরীচিকা তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন রশিদ খান, ফজল হক ফারুকিরা। বাংলাদেশের টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার কেউ যেন কোন প্রতিরোধই গড়তে পারল না আফগান বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে। এটা মেনে নিতে দ্বিধা নেই যে, আফগানিস্তানের এই বোলিং আক্রমণ বিশ্বসেরা।
প্রথম ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা খাবি খেয়েছে। যেই ব্যাটিং দৃঢ়তার চিত্র গত দুই সিরিজে দেখেছে গোটা দেশ, সেটা নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। প্রথম ওয়ানডেতে উইকেটের অসম বাউন্সের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেরা দায়মুক্ত হতে চেয়েছেন। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে, সেই তত্ত্ব ধোপে টেকে না।
একই উইকেটে আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটি রেকর্ড গড়া পার্টনারশিপ করেছে। সেখানে বাংলাদেশের ৬ উইকেট নেই ৭২ রান তুলতেই। তাতে অবশ্য বাংলাদেশি ব্যাটারদের সামর্থ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তার অন্তত এতটাও খারাপ পরিস্থিতিতে নেই। শুধু একটা ভ্রমের মধ্যে দিন পার করছিলেন। সেটা কেটে যাওয়ার কথা বোধহয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি বোলারদেরও সেই ভ্রম কেটে যাওয়াই কথা। যদিও এক্ষেত্রে আবার উইকেটের দোহাই দেওয়া যায়। কিন্তু একই উইকেটেই তো প্রতিপক্ষ বোলাররা দাপট দেখিয়েছে। পরিকল্পনার ছক এঁকে, সঠিক লাইন, লেন্থ আর স্কিলের ব্যবহার করে উইকেট তুলে নিয়েছে। তবে বাংলাদেশের বোলারদের একটা লম্বা সময় উপোস থাকতে হয়েছে। একই রকম পরিস্থিতি দুই ওয়ানডেতেই।
পেসারদের জয়গানের মাঝেও ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হতে হয়েছে সাকিবকে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো তিনি এনে দিয়েছিলেন ব্রেকথ্রু। তা না হলে সম্ভবত সবচেয়ে বড় হারের লজ্জায়ই পড়ত হতো বাংলাদেশকে। মানসম্মত বোলিং আক্রমণের সামনে এভাবে খাবি খাওয়া অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন নয়। তবে শিরোপা জয়ের নেশায় বুদ হয়ে থাকা দলের ক্ষেত্রে তো এমন চিত্র রীতিমত হাস্যরসের জোগান দিবে। হচ্ছেও তাই।
অন্তত এবার বাংলাদেশের সন্তুষ্টির ঢেকুর তোলার যেই রীতি, সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা উচিত। প্রতিটা খেলোয়াড়ের উচিত নিজেদেরকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশনে নামা। সামনে থাকা মরীচিকাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে না নেওয়া। সর্বোপরি একটি দল হিসেবে খেলা। কেবল তবেই শিরোপা জয় সম্ভব।
ও হ্যাঁ, তামিমকে নিয়ে হওয়া কাণ্ডও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে অন্তত খেলার মাঠে বাইরের বিষয় ভুলে যাওয়াই উত্তম। লিটন দাস সংবাদ সম্মেলনে সেই ইঙ্গিত দিলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পুরো দল, তামিমের ঘটনার রেষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অন্তত শুরুর দিকে বেশ দিশেহারাই ঠেকেছে তাদেরকে।