যে কোন খেলায় বিশ্বকাপ খেলাটা সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। দাবাও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার দুজন গ্র্যান্ডমাষ্টার অংশ নিতে যাচ্ছেন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই আসরে। দেশের কোটাতে নিয়াজ মোরশেদ ও বাছাইপর্ব খেলে জিয়াউর রহমান বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা। ২০০৭ সালে প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এনামুল হোসেন রাজীব প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পেরুতে পেরেছিলেন। এরপর আর কোন দাবাড়ু রাজীবের এই অর্জনকে পেছনে ফেলতে পারেনি। এবার সর্বোচ্চ অর্জনের লক্ষ্যে নয়, খেলাটাকে উপভোগ করতেই রাশিয়া যাচ্ছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই দাবাড়ু।
কারণ বিশ্বকাপে খেলার মতো প্রস্তুতি দুজনের কেহই নিতে পারেননি। করোনাকালীন এই সময়ে রাশিয়ায় যাওয়ার আগে যে ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়ছে তাতেই অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সেখান থেকে বিশ্বকাপে খেলতে যেতে পারাটাকেই বড় করে দেখছেন তারা।
এমনিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই করোনার ডেল্টা ধরণ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা সংক্রমন সাধারন মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেই রাশিয়া যাওয়ার সবকিছু তৈরি করতে হয়েছে নিয়াজ-জিয়াকে। কখনো এতটা মানসিক চাপে পড়তে হয়নি জিয়াউর রহমানকে। এর আগে চারবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কিন্তু এবারের মতো এতটা বাজেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি তিনি। ১০ জুলাই রাশিয়ার সোচিতে শুরু হতে যাওয়া এই আসরে তাই বড় কোন প্রত্যাশা নেই। বিশ্বকাপে খেলতে এরই মধ্যে রাশিয়া পথে রয়েছেন এই দুজন। রাজধানী ঢাকা থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ হয়ে ১০ জুলাই আরেকটি বিমানে সোচিতে পৌছবেন দুজন। যার মধ্যে ১২ জুলাই প্রথম রাউন্ডে মুখোমুখি হবেন ইরানী গ্র্যান্ডমাষ্টার পুয়া ইদানির বিপক্ষে।
যিনি আবার দাবা জগতে দেশের বাইরে জিয়ার সবচেয়ে ভাল বন্ধু হিসেবে পরিচিত। সে হিসেবে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে থেকেই প্রথম ম্যাচটা খেলতে নামতে পারবেন জিয়া। অন্যদিকে নিয়াজ মোরশেদ প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন প্যারাগুয়ের নিউরিস দেলড়াদো রামিরেজকে। নিয়াজ-জিয়াকে নিয়ে তাই দাবা ফেডারেশনও খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব আসরে খেলতে পারাটাই বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হয়েছে ভিসা নিতে গিয়ে।
ভিসার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা বড় একটি ঝামেলা হয়েছিল। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে যায় নিয়াজ-জিয়ার। এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াতে গিয়ে ক্লান্তি ভর করেছে। খেলাটা তাই জিয়াউর রহমানের কাছে হয়ে পড়েছে গৌন, ‘আগে চারবার বিশ্বকাপে খেলেছি আমি। কিন্তু এবারের মতো এতটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি কখনোই। আমি করোনার টিকা দিতে পারিনি। তাই যেখানেই গিয়েছি সেখানেই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।’
বিশ্বকাপে যেতে কাগজপত্রের পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক বিষয়ে ফেডারেশনের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জিয়া বলেন, ‘ফেডারেশন সহায়তা না করলে বিশ্বকাপে খেলাটাই কঠিন হয়ে যেত। সব জায়গাতেই তারা আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে লকডাউনের কারণে ভিসা পেতে অনিশ্চয়তা ছিল। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার শংকাও ছিল। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যেতে পারছি এটাই বড় স্বস্থির। সে কারণে খেলা নিয়ে সেভাবে মনযোগ দিতে পারিনি। তাই বড় কোন প্রত্যাশা করছিনা।’
জিয়া ২০০৭, ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে খেলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে যেটি সর্বোচ্চবার অংশগ্রহন। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইরানী ইদানির সঙ্গে খেলতে পারাটাকে স্বস্থি হিসেবেই দেখছেন। বিদেশে দুজন কোন টুর্নামেন্টে খেললে থাকেন একই হোটেলে। অবসরে হোটেল লবিতে টেবিল টেনিস খেলে থাকেন। বাবার সুত্র ধরে ছেলে তাহসিন তাজওয়ারের সাথেও বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সেটি এখন তার জন্য তৃপ্তির বিষয়।
র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বড় আর কঠিন প্রতিপক্ষের সাথেই খেলতে হয় বাংলাদেশি দাবাড়ুদের। নিয়াজ মোরশেদও তাই বড় কিছু আশা দেখছেন না, ‘রাশিয়া যাওয়ার আগে অনেক সমস্যা পেরিয়ে ভিসা পেতে হয়েছে। খেলায় সেভাবে মনযোগ দিতে পারিনি। তবুও চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা মেলে ধরার। কারণ ভাল কিছু মানুষ নিজের খারাপ সময়েই পেয়ে থাকে।’
তবে জিয়াউর রহমান এবার সঙ্গী হিসেবে নিয়াজকে পাওয়ায় বেশি খুশি হয়েছেন। বড় ভাই, পরামর্শক সবই যে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার। এর মধ্যে যদি স্বরণীয় কিছু করতে পারেন সেটাই হবে বড় পাওয়া।