একটি শিরোপার জন্য হাহাকার

তবে যেদিন মেসি জ্বলে ওঠবেন সেদিন পরিসংখ্যানকে থোরাই কেয়ার করতে খুব বেশি সময়ও নেবেন না। আর্জেন্টিনা ভক্তরা হয়তো সেটারই অপেক্ষায় থাকবেন। বিশেষ করে নিজের ক্যারিয়ারে যতগুলো আন্তর্জাতিক আসর খেলেছে মেসি তার মধ্যে এবারই গোল করা এবং করিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। ২০০৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বশেষ ৩-১ গোলের জয় এসেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। এবার জিতলে সকল পরিসংখ্যান নতুন করেই লেখা হবে। অন্ততপক্ষে যারা মেসিবিরোধী তারাও চাইছেন একটি শিরোপা জিতুক এই সুপারস্টার।

লিওনেল মেসি নামের যে ফুটবলারটি বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তার প্রাপ্তির পাশাপাশি হতাশাও রয়েছে। সেটি ক্লাব ফুটবলে নয়, জাতীয় দলের জার্সিতে। মেসিকে ম্যারাডোনা হতে হলে যে কয়টা শিরোপা জেতার প্রয়োজন সেটি যে নেই এলএম টেনের। এবার সেটির খুব কাছে এসে পৌছেছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে পৌছে গেছে তার দল।

এর আগে একাধিক আন্তর্জাতিক আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নিজ দেশকে ফাইনালে ওঠালেও শিরোপা হাতে নিয়ে উল্লাস করা সম্ভব হয়নি। যেমন করে এবার দলটির ডিফেন্ডার লিয়েন্দ্রো পারদেস বলেছেন, একটি শিরোপার জন্য তারা জীবন দিতে রাজি আছেন। এতেই পরিস্কার হয়ে যায় কতটা প্রয়োজন একটি শিরোপার।

দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কোপা আমেরিকা কাপ ছাড়াও বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নয়টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মেসি দেশের জার্সি গায়ে খেলেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এবারের কোপার মতো এতটা বাল তিনি কখনোই কোন টুর্নামেন্টে খেলেননি। আর্জেন্টিনাকে পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে নিয়ে গেছেন।

মেসি যতটা না বার্সেলোনার ততটা নয় জাতীয় দলের, এমন অভিযোগ বেশ পুরনো। এবার একটি আসরে খেলেই সে কথা যে সত্য নয় সেটির প্রমাণ দিয়েছেন। প্রশংসা পেয়েছেন সব মহলের। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত চারটি গোলের একটি আবার করেছেন কোয়াটার ফাইনালে। যেখানে কাটিয়েছেন পাঁচ বছরের খরা। সতীর্থদের দিয়ে পাচঁটি গোল করিয়েছেন।

সর্বশেষ সেমিফাইনালে মেসির বাড়ানো বল থেকেই লাওতারো মার্টিনেজের গোলেই কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ষষ্ট মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে এখনো শিরোপা খরা কাটাতে পারেননি। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ কোপার ফাইনালে ওঠলেও জেতা হয়নি শিরোপা। এবার তাই কোন প্রকার রাখঢাক না রেখেই মেসি বলেছেন, ‘সবসময় বলে বলেছি, ব্যক্তিগত পুরস্কার আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা এখানে এসেছি ভিন্ন কিছুর করার জন্য। আমাদের একটি লক্ষ্য আছে এবং আমাদের মনোযোগ একমাত্র শিরোপার দিকেই।’

১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপরের সময়টা কেটেছে একরাশ হতাশা নিয়ে। তবে একটা শিরোপা মেসি জিতেছেন সেটি ২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমসর ফুটবলের স্বপদক। অনুর্ধ্ব-২৩ দলের হওয়ায় শিরোপাটাকে ততটা মূল্য দেওয়া হয়না। নিজেকে উজাড় করে দিয়েও ফিফার ছয়বারের বর্ষসেরার পুরস্কার জেতা মেসি সফল হতে পারছেন না।

বলা যায় দলে মেসিকে জোগান দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত খেলোয়াড় না থাকাই সাফল্যের পথে বড় অন্তরায়। দুই বছর আগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপার আসরে শেষ ষোল টপকে গিয়েও সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে হেরে হতাশ হতে হয়েছে। বলা যায় শিরোপা জেতার মতো একটা প্রজন্ম এখনো তৈরি হয়নি আর্জেন্টিনায়।

যেভাবে নিজেদের তৈরি করে ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে পৌছে গেছে। খারাপ সময় কাটিয়ে ইতালি তাদের সঙ্গী হয়েছে। আর্জেন্টিনাকে যদি মেসি নির্ভর দল বলা হয় তাহলে এতটুকু ভুল বলা হবেনা। একটা দল হিসেবে খেলতে না পারার কারণেই বড় সাফল্য পাওয়া হয়নি। এবার হয়তো সেই খরা কাটতেও পারে।

টানা দুই আসরে শিরোপা থেকে হাতছোয়া দুরত্বে অবস্থান ছিল মেসিদের। এবারের দলের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে শিরোপা জেতার কথা তাদের। আর্জেন্টিনা শিরোপা জিততে পারলে এবার হয়তো দুখী রাজপুত্র মেসির মুখে হাসি ফুটবে। তবে পরিসংখ্যান কিন্তু মেসিদের পক্ষে কথা বলছেনা। ফাইনালে আর্জেন্টিনার বড় বাধা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল ব্রাজিল। সবচেয়ে বড় কথা নেইমারের দলটি এবার আবার স্বাগতিকও। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে এখনও ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার কাছে পরাজয়ের মুখ দেখেনি ব্রাজিল।

মহাদেশীয় লড়াইয়ে ঘরের মাঠে পাঁচবার কোপার আসর আয়োজন করে প্রতিবারই শিরোপা উল্লাসে মেতেছে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতা দলটি। শুধু তাই নয়, ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা আয়োজন করে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটিও নেইমাররা। ১৯১৯ সালে শুরু করে সবশেষ ২০১৯ সালে জিতেছে শিরোপা।

মাঝে ১৯২২, ১৯৪৯ ও ১৯৮৯ সালে স্বাগতিক দল হিসেবে প্রতিটি লড়াইয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্টত্ব জেতে সেলেসাওরা। সেখানে আলবি সেলেস্তারা হতাশ হতে হয়েছে। দুই দলের সবশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও শেষ হাসি হেসেছে ব্রাজিল। ২০০৭ সালে তারকা ঠাসা আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপার দেখা পেয়েছিল তারা।

তবে যেদিন মেসি জ্বলে ওঠবেন সেদিন পরিসংখ্যানকে থোরাই কেয়ার করতে খুব বেশি সময়ও নেবেন না। আর্জেন্টিনা ভক্তরা হয়তো সেটারই অপেক্ষায় থাকবেন। বিশেষ করে নিজের ক্যারিয়ারে যতগুলো আন্তর্জাতিক আসর খেলেছে মেসি তার মধ্যে এবারই গোল করা এবং করিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। ২০০৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বশেষ ৩-১ গোলের জয় এসেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। এবার জিতলে সকল পরিসংখ্যান নতুন করেই লেখা হবে। অন্ততপক্ষে যারা মেসিবিরোধী তারাও চাইছেন একটি শিরোপা জিতুক এই সুপারস্টার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...