ঈদের আড়মোড়া ভেঙে ঢাকা শহর ব্যস্ত হতে শুরু করেছে কেবল। তবে ব্যস্ততা ছড়িয়ে গেছে টাইগার ক্রিকেটে। হেডমাস্টার ফিরে এসেছেন ঢাকায়। তাও আবার সবার আগে। বছরটা বাংলাদেশের হবে, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের মত খেলোয়াড়রা সেটাই বিশ্বাস করতে চান।
আগামী মাসের শুরুতে ইংল্যান্ড যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। আতিথিয়েতা অবশ্য দেবে আয়ারল্যান্ড। সেখানে আইরিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে তামিম ইকবালের দল। এর আগে সিলেটে বসবে ক্যাম্প। আয়োজন শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।
২৭ এপ্রিল সকাল থেকেই শুরু হবে ক্যাম্প। সেটাও আবার ক্লোজডোর। থাকবে না কোন মিডিয়া কাভারেজ। কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে নিশ্চয়ই কোন এক মাস্টার প্ল্যান করেছেন। যেই পরিকল্পনার ছিটেফোঁটাও তিনি জানাতে চাননা বিশ্ব মিডিয়াকে। শীর্ষ্যদেরকে নিয়ে গভীর কোন ছক কষতেই হয়ত এই আয়োজন।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের চাপটা রয়েছে বেশ। মে মাসের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর বেশ খানিকটা বিরতি দিয়ে, জুনে আফগানিস্তান আসবে হোম অব ক্রিকেটে। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে আফগানরা। দুই টেস্ট ও তিনটি করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে দু’দল।
সেই সিরিজটা একপ্রকার প্রস্তুতি সিরিজ বলা চলে। কারণ এরপরই বাংলাদেশের বড় অ্যাসাইনমেন্ট এশিয়া কাপ। যদিও মাঝের সময়টাতে থাকছে দীর্ঘ বিরতি। সেই বিরতিতে নিশ্চয়ই আরও একটি ক্লোজডোর ক্যাম্প করতে চাইবেন কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাতাসে নানানরকম সমালোচনার বিস্তার ঘটেছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে শুরু যার। রিয়াদ দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তাকে এক প্রকার দল থেকে ছেটে ফেলা হয়েছে। তাতেই যেন শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে তার অভিজ্ঞতার বেশ মূল্য রয়েছে বলেই মত সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধাদের।
যদিও তিনি নেই জাতীয় দলের পরিকল্পনায়। বিগত বেশ কিছু সিরিজেই তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দলেও নেই তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সিলেটে হওয়া ক্যাম্পে ডাক মেলেনি তার। সেই নিয়েই যত আলোচনা আর সমালোচনা। কোচ হাতুরু নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপের জন্যে বাছাই করে ফেলেছেন।
আর কিছু খেলোয়াড়কে আসন্ন সিরিজগুলোতে বাজিয়ে দেখবেন। সেদিক থেকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মঞ্চ হতে পারে এশিয়া কাপ। কিন্তু সেখানেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সুযোগ পাওয়াটা হতে পারে মরীচিকা। কেননা ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব একটা আলকরশ্মির দেখা মিলছে না তার ব্যাট থেকে। তিনি ছাড়াও কপাল পোড়া আফিফ হোসেন ধ্রুব।
তিনিও লম্বা সময় ধরে ছিলেন বাংলাদেশের লোয়ার মিডল অর্ডারের স্তম্ভ। তবে তিনিও মোটামুটি পরিকল্পনার বাইরে। হাতুরুর ব্যাডবুকে জায়গা হয়েছে তার। তবে আফিফ বেশ কিছু দূর্দান্ত ইনিংস খেলে টাইগারদের জয়ে রেখে অবদান। সেই স্মৃতি হাতরে সমালোচনার সূত্রপাত। তারও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটুকু বেশ ক্ষীন।
তবে কোচ হাতুরুসিংহে নিজের সিদ্ধান্তে বেশ অনড়। তাছাড়া ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগের দিন, তিনি বেশ সময় নিয়ে আলোচনা করেছেন জাতীয় নির্বাচকদের সাথে। সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ছাড়াও বাকি দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ও আব্দুর রাজ্জাক। তাদের সাথে আলাপ শেষে গণমাধ্যমেও কথা বলেছেন হাতুরু।
তিনি জানিয়েছেন দলের সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ক্লোজডোর ক্যাম্পের আয়োজন। অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশ প্রবল। নির্বাচকদের সাথে আলোচনায় নিশ্চয়ই ক্রিকেট পাড়ায় চলা সমালোচনার বিষয়গুলো নিয়েও আলাপ করেছেন হাতুরু। কড়া হেডমাস্টার খ্যাতির ব্যত্যয় ঘটাবেন না নিশ্চয়ই।
অন্যদিকে এশিয়া কাপের পর বাংলাদেশে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসবে নিউজিল্যান্ড। ঠিক বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে প্রস্তুতির একেবারে যথাযথ মঞ্চ। সেই সিরিজটা বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের দল নিয়েই খেলতে চাইবে। কার্যত হাতে খুব বেশি সময় নেই কোচ হাতুরুসিংহের। সেই বিষয়টা নিশ্চয়ই তিনি জানেন।
স্বল্প সময়ে হাতের কাছে থাকা রসদের পূর্ণ ব্যবহারটাই করতে চাইবেন তিনি। সর্বোপরী একটা বিশ্ব শিরোপা জয়ের চেষ্টাই করতে চাইবে গোটা দল। চেনা কন্ডিশন, পছন্দের ফরম্যাটের বৈশ্বিক আয়োজনকে লাল-সবুজ রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার এইতো সূবর্ণ সুযোগ। দলের প্রতিটা খেলোয়াড় নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছে।
তবে বড় কোন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটু রুঢ় সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। সবার পছন্দ হয়ত হবে না। সবার পছন্দ হওয়াটাও প্রয়োজনীয় নয়।